ভারতবর্ষে বয়স্ক নাগরিকের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। বিশ্বের অধিকাংশ উন্নত দেশেই এই সংখ্যা উর্ধ্বমুখি – বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সন্তান প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর নিজেরটা নিজে বুঝে নেয়, বুড়ো বাপ-মা পড়ে থাকেন বৃদ্ধাশ্রমে। আমাদের দেশে বহুদিন যৌথ পরিবারের ধারণা প্রচলিত ছিল – মৃত্যুর দিন পর্যন্ত পরিবারের বয়স্ক মানুষটিকে সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনটাই স্বাভাবিক মনে হত।
কিন্তু এদেশেও বুড়ো বয়সের বাবা-মায়ের দায়িত্ব নিতে চাইছে না সন্তান, তাঁরা একা একটেরে হয়ে পড়ে আছেন এমনটা হামেশাই দেখা যাচ্ছে আজকাল। কাজের সূত্রে বহু সন্তান ছড়িয়ে পড়েছেন পৃথিবীর নানা প্রান্তে – সহায়কের ভরসায় তাঁদের অভিভাবকরাও একাই থাকেন। কিন্তু যাঁদের আর্থিক সামর্থ্য নেই, তাঁদের অবস্থা যে কতটা শোচনীয় হতে পারে, তার এক নমুনা দেখা গেল হালে।
জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে সারা ভারত যখন কনকনে শীত উপভোগ করছে জমিয়ে, তখন এক কুয়াশাঢাকা ভোরে ইন্দোর শহরের উপকণ্ঠের এক আধা-গ্রামের বাসিন্দারা দেখেন হাইওয়ের উপর এসে থেমেছে একটি ট্রাক, শতচ্ছিন্ন বস্ত্র পরা অসহায় কিছু বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে তার পেটের ভিতর থেকে হিড়হিড় করে টেনে নামাচ্ছেন পুরসভার কর্মীরা। শহর সাজানো হবে, তাই ঘরহীন, অসহায়, কপর্দকশূন্য বুড়োবুড়িদের ঠাঁই নেই সেখানে।
স্থানীয় বাসিন্দারা রুখে দাঁড়ান এই অমানবিক দৃশ্য দেখে, সোশাল মিডিয়া ভরে যায় ভিডিয়োতে। পুরসভার কর্মীরা বলেন, তাঁরা উচ্চপদস্থদের আদেশ পালন করছেন মাত্র। তড়িঘড়ি ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামে সরকার, একাধিক অফিসারকে ধরানো হয় সাসপেনশনের চিঠি।
কিন্তু প্রশ্নটা থেকেই যায় – কী হবে এই মানুষগুলোর? যাবেন কোথায় তাঁরা? পরিসংখ্যান বলছে, ভারতে বয়স্ক নাগরিকের সংখ্যা ২০৫০ সালের মধ্যে ৩০০ মিলিয়ন ছাড়াবে। তাঁদের দেখভালের দায়িত্ব এড়াতে পারে না সরকার। তাই মন্ত্রিসভার বিভিন্ন দফতরের মধ্যে বারংবার মিটিং বসে। জণকল্যাণ, আর্থিক নীতি, স্বাস্থ্য, পরিবারকল্যাণ, নগরোন্নয়ন প্রভৃতি মন্ত্রক মিলিত হয়ে তৈরি হয়েছে নীল নকশা। এই সমস্যার মোকাবিলায় সরকার কীভাবে এগোচ্ছে জানতে চান?
. বয়স্কদের জন্য শুরু হচ্ছে ‘পোষণ অভিযান’। এর আওতায় দুপুরবেলায় রান্না করা গরম খাবার তুলে দেওয়া হবে অসহায়, উপার্জনহীন বয়স্ক নাগরিকদের হাতে। পুরসভা ও গ্রাম পঞ্চায়েতের উপর ভার থাকবে এঁদের চিহ্নিতকরণের, ছোট ছোট সেন্টারের উপর খাবার রান্না ও পরিবেশনের দায়িত্ব দেওয়া হবে।
. প্রতি বছর বাড়বে সেন্টারের সংখ্যা। ২০২৪-২৫-এর মধ্যে রোজ ২,৭৫,০০০ জন অসহায় মানুষের ভরপেট দ্বিপ্রাহরিক খাবারের ব্যবস্থা করার লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে। তবে যে সব গ্রাম পঞ্চায়েত বা মিউনিসিপ্যালিটি এলাকায় বৃদ্ধাশ্রম নেই, তারাই এই স্কিমে অগ্রাধিকার পাবে। কেন্দ্রের তরফে রাজ্য সরকারগুলি বেছে নেবে মিউনিসিপ্যালিটি ও গ্রাম পঞ্চায়েত।
. যে সব স্টার্ট আপ বয়স্কদের দেখভাল ও কল্যাণের কাজ করবে, তাদের বিশেষ সহায়তা জোগানো হবে সরকারের তরফে। স্বনির্ভর সংস্থার মাধ্যমে এঁদের নানা কাজকর্ম শেখানোর চিন্তাভাবনাও আছে। এমনকী সুস্থ, সবল সিনিয়র সিটিজেনদের কর্মক্ষম করে তোলা ও এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে তাঁদের কাজের ব্যবস্থা করার প্ল্যানও আছে সরকারের।