তেলের দাম রোজ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। কলকাতায় গত শনিবার এক লিটার পেট্রোলের দাম ছিল ৯৮.৩০ টাকা, ডিজেলের মূল্য ৯১.৭৫ টাকা। ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে ১০০ টাকার মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে তেলের দাম।
জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়লেই নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি হবে – সেটাই স্বাভাবিক। খাদ্যদ্রব্য থেকে আরম্ভ করে বাস, ট্যাক্সি, প্লেনের ভাড়া বাড়বে। সোজা কথায়, আগে আপনি যেভাবে জীবন কাটাতেন, সেই মানের জীবনযাপনের জন্য আপনাকে বাড়তি টাকা খরচ করতে হবে।
এখনও গণ পরিবহন চালু হয়নি পুরোপুরি, হলে অনেক বেশি মানুষ বাইরে বেরোবেন এবং তখনই পকেটে ছেঁকাটা টের পাওয়া যাবে! কিন্তু কেন বাড়ছে তেলের দাম? কোনওভাবে কি তা ঠেকানো যায়? কবে কমতে পারে এই অবস্থা? এগুলি জানতে গেলে আরও বেশ কিছু বিষয় বুঝে নেওয়া দরকার।
. জুনের প্রথম সপ্তাহে আন্তর্জাতিক বাজারে রেকর্ড মূল্য ছুঁয়েছে অপরিশোধিত তেলের মূল্য। এক ব্যারেল তেলের দাম ৭৪ ডলার ছাড়িয়েছে এ মাসেই। এ বছরের গোড়ায় যা দাম ছিল, তার চেয়ে ৪০% দাম বেড়েছে এই কয়েক মাসেই।
. গত বছর করোনা ভাইরাসের কারণে সারা পৃথিবীতে যখন কলকারখানা, যানবাহন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তখন তেল উৎপাদনকারী দেশগুলি ভয়ানক ক্ষতির মুখোমুখি হয়। তাদের হাতে তেল ছিল প্রচুর, বাজারে ক্রেতা ছিল না, তাই ২০২০তে একটা সময়ে অশোধিত তেলের প্রতি ব্যারেলের মূল্য নেমে গিয়েছিল ১৯ ডলারে!
. তখনই পেট্রোলিয়াম উৎপাদন ও রফতানিকারী দেশগুলির সংগঠন OPEC তেলের উৎপাদন কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এ বছরেও অনেক দেশেই লকডাউন বা কিছু না কিছু বিধিনিষেধ আছে, কিন্তু অর্থনীতিকে স্বাভাবিক করে তোলার চেষ্টাও করা হচ্ছে একই সঙ্গে। তাই তেলের চাহিদা গত বারের তুলনায় বেড়েছে, কিন্তু OPEC গত বছরের ক্ষতির ধাক্কা সামলে উৎপাদন বাড়াতে আগ্রহী নয়।
. ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি তেল রফতানিকারী দেশগুলিকে উৎপাদন বাড়াতে বলেছে, তাতেও এ বছরের শেষের আগে বাজারে জোগান উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে না।
. ইরান OPEC-কে অনেকটা তেলের জোগান দিত, কিন্তু পশ্চিমি দেশগুলির সঙ্গে পরমাণু চুক্তির সময়ে কিছু মনোমালিন্য হওয়ায় ইরান কোনও তেল রফতানি করছে না দেশের বাইরে। ইরান আর আমেরিকার সম্পর্ক আগামী দিনে উন্নত হওয়ার আশা কম। আর সে ক্ষেত্রে ইরান OPEC-কে তেল দেবে না।
. ‘ফোর্বস’ পত্রিকার ধারণা, এ বছরের শেষে আমেরিকায় এক ব্যারেল তেলের দাম ১০০ ডলার ছুঁতে পারে। আন্দাজ করতে পারছেন, তার ফলে কী হতে পারে?
. তবে OPEC তার আগেই নিজেদের স্ট্র্যাটেজি বদলাবে, এমন একটা আশাও আছে। তেলের দাম বাড়লে গোটা দুনিয়ায় অর্থনীতি আরও ধুঁকবে, তা হলে তেল বিক্রেতারাও খুব ভালো থাকবে না।
. ভারত সরকার কোভিডকালীন হওয়া আর্থিক ক্ষতির খানিকটা পূরণ করার জন্য পেট্রোলে লিটার প্রতি ১৩ টাকা আর ডিজেলে ১৬ টাকা এক্সাইজ ডিউটি বাড়িয়েছে। তার পর আছে রাজ্য সরকারের ট্যাক্স। পেট্রোলের দামের ৫৮ শতাংশ আর ডিজেলের ৫২ শতাংশ সরকারের ঘরে ঢোকে রাজস্ব বাবদ।
. বুঝতেই পারছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেশ খানিকটা না পড়লে বা সরকার রাজস্ব না কমালে তেলের দাম কমা অসম্ভব?