ক্রিপ্টোকারেন্সি হচ্ছে ডিজিটাল কারেন্সি। আজ আপনি অর্থের বিনিময়ে যেভাবে নানা জিনিসপত্র ও পরিষেবা কিনছেন, একটা সময়ে সেই কাজটা করার জন্য হয়তো মানুষ ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করবে। আপনার হাতে কোনও টাকা থাকবে না — পুরোটাই সুরক্ষিত থাকবে বাইনারি ডেটা হিসেবে। ব্যাপারটা অনেকটা মলের ফুডকোর্টে গিয়ে টাকা দিয়ে কুপন কিনে তার বিনিময়ে নানা সার্ভিস কেনার সঙ্গে তুলনীয়।
বলা হয় যে ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেন খুবই সুরক্ষিত, তাই বিনিয়োগ থেকে আরম্ভ করে দৈনন্দিন প্রয়োজন, সবেতেই তার ব্যবহার বাড়বে ভবিষ্যতে। ‘ব্লকচেন’ নামক এক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ক্রিপ্টোকারেন্সি সুরক্ষিত রাখা হয় – সিস্টেমটা খুবই ‘ডিসেন্ট্রালাইজড’ – বহু কম্পিউটারে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকবে আপনার লেনদেনের হিসেব।
ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেনে ব্যাঙ্কের কোনও ভূমিকা নেই। কেউ জানতে চাইবে না যে টাকাটা লগ্নি করছেন তা সাদা, না কালো। তবে এটি বেআইনিও নয়। তাই এক শ্রেণির অতি ধনী মানুষের কাছে এর প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। ফুটবলার লিওনেল মেসি পারি সঁ জারমঁ-য় চুক্তি করে বিপুল অর্থের পাশাপাশি প্রচুর ক্রিপ্টোকারেন্সিও পেয়েছেন। ‘টেসলা মোটরস’ ও ‘স্পেসএক্স’-এর মালিক ইলন মাস্ক প্রচুর টাকা লগ্নি করেছেন ক্রিপ্টোকারেন্সিতে।
তবে সুরক্ষা নিয়ে যতটা বড়াই করা হচ্ছে, ততটা নিশ্চিন্ত হওয়া যায় কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কিছুদিন আগেই এক হ্যাকার ব্লকচেন সিস্টেম ঘেঁটে দিয়ে ৬০০ মিলিয়ন ডলার ক্রিপ্টোকারেন্সি সরিয়ে ফেলেছিল — তবে তার অর্ধেকটাই সে ফিরিয়ে দিয়েছে। পলিনেটওয়ার্ক নামক যে প্ল্যাটফর্ম ব্লকচেনের নিয়ন্ত্রক, তাদের সিস্টেমে কোনও গন্ডগোলই ছিল এই বিপর্যয়ের কারণ।
কীভাবে ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনা যায়?
Coinmarketcap.com নামক মার্কেট রিসার্চ সংস্থার মতে, এই মুহূর্তে বাজারে অন্তত ১০০০০ ক্রিপ্টোকারেন্সি আছে, সবচাইতে জনপ্রিয় হচ্ছে বিটকয়েন। নতুন নতুন কোম্পানি গজাচ্ছে নিত্যদিন, তাদের কয়েনের দাম কম, ক্রেতাদের আকর্ষণ করার জন্য তারা নানা সুবিধে পাইয়ে দেয় – নিয়মিত বোনাস দিয়ে আপনার জমা রাশি বাড়িয়ে তোলা হবে। বহু স্টার্ট আপ সংস্থা বিটকয়েনের ব্যবসায় নেমেছে, অনেকে খুব কম দামে তা বাজারে ছাড়ছেও। তবে বিনিয়োগ করার আগে ভালো করে চিন্তাভাবনা করে নেওয়া জরুরি।
ক্রিপ্টোকারেন্সির ট্রেডিং এক্সচেঞ্জ হয়, তারা অনলাইন ওয়ালেট বানিয়ে আপনার হয়ে টাকার হিসেব রাখবে। বিটকয়েন কেনা যায় আমেরিকান ডলারের বিনিময়ে। বিভিন্ন কারেন্সির ক্ষেত্রে নিয়ম আলাদা।
বহু মানুষ এখন কম দামে ক্রিপ্টোকারেন্সি কিনে রাখার পক্ষপাতী, তাঁদের ধারণা আগামীদিনে এটাই বিনিময়ের মাধ্যম হয়ে উঠবে। তখন তাঁদের সন্ততি বা উত্তরাধিকারীরা তার ফায়দা তুলতে পারবে।
আবার অনেকে মনে করেন, ক্রিপ্টোকারেন্সি অদূর ভবিষ্যতে মোটেই খুব জনপ্রিয় হবে না। আর যতক্ষণ না তা মেনস্ট্রিমে আসছে, ততক্ষণ বেশি আশাবাদী হয়ে লাভ নেই। কারণ আপনি যে টাকা বিনিয়োগ করে এই কারেন্সি কিনবেন, তার চেয়ে বেশি টাকা খরচ করে বাজার থেকে তা তুলে নেওয়ার আগ্রহ অন্য কারও মনে জন্মালে তবেই বিনিয়োগ করা টাকা ফেরতের আশা আছে।
তবে খেয়াল রাখবেন, এই কারেন্সির বাজারে ওঠা-পড়া খুব বেশি হয়। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে বিটকয়েনের ট্রেডিং হয়েছিল ২০,০০০ ডলারে — এক বছর বাদে তা নেমে আসে ৩২০০-য়! ২০২১-এর এপ্রিলে ফের ২.২ ট্রিলিয়ন ডলারের রেকর্ড ছুঁয়েছিল, আগস্টে বিটকয়েনের মার্কেট ভ্যালু ১.৬ ট্রিলিয়ন ডলার।