ছেলেবেলার বন্ধুত্বের সঙ্গে শীতের ভোরে লেপের ভিতর আরও একটু সেঁধিয়ে যাওয়ার আরামের একটা তুলনা হতে পারে – তাই না? যত দিন যায়, বয়স বাড়ে — তত বেশি করে চেপে ধরে নস্টালজিয়া। হাজারো ব্যস্ততার মাঝেও সময় বের করে বন্ধুদের সঙ্গে খানিক আড্ডা দেওয়ার জন্য মন কেমন করে।
ঠিক এই জায়গাটা থেকেই শুরু হয় পরিচালক নির্মাল্য চক্রবর্তীর ছবি ‘রিইউনিয়ন’ (ইনি পরিচালনার পাশাপাশি গল্প ও চিত্রনাট্য লিখেছেন, অভিনয় করেছেন এবং সুরযোজনা করেছেন ছবিতে)। নদীর ধারে চমৎকার এক লোকেশনে পিকনিক করতে গিয়েছেন মধ্যবয়সি কয়েকজন পুরুষ। তাঁরা সবাই নিজের নিজের কাজের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত, পরিচিতিও আছে।
গোড়া থেকেই কিন্তু বোঝা যায় কোথাও একটা তাল কাটছে – বার বার একজন সঙ্গীর অনুপস্থিতির কথা উঠে আসে আলাপচারিতায়। কেউ কেউ এ অনুপস্থিতি নিয়ে নিরুত্তাপ, কেউ শূন্যতা মেনে নিতে অপারগ। কিন্তু কোথায় হারালেন মানুষটি?
১৭ মিনিটের ছবি যত গড়ায়, তত উন্মোচিত হয় রহস্যের পরত। বাইরে বেধেছে দাঙ্গা, চলছে প্রবল ঝড়বৃষ্টি। এই দুর্যোগকে প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করে পরিচালক মানবিক সম্পর্কের নানা অন্ধকার দিক প্রকাশ্যে এনেছেন। মানুষ কি সত্যিই আদৌ বন্ধু হতে পারে? নিজের স্বার্থে ঘা লাগলে আত্মীয়, পরিজন, বন্ধু সবাই কি তুচ্ছ হয়ে যায়? এমন নানা প্রশ্ন দর্শকের মনে উঠতে বাধ্য।
সম্পর্কের গল্প হলেও একেবারে শেষদিকে হরর ছবির শিহরণ আছে, আছে গানের সুন্দর ব্যবহার। যাঁরা এ ছবির সঙ্গে যুক্ত, তাঁরা কেউই পেশাদার অভিনেতা নন, কিন্তু তাতে ছবির গুণমানের চ্যুতি হয়নি। প্রথম প্রয়াস হিসেবে ‘রিইউনিয়ন’ নজর কাড়তে বাধ্য। আশা করা যায় যে পরিচালক আগামীদিনে আরও ভালো কাজ উপহার দেবেন। ছবিটি দেখা যাবে ইউটিউবে।