এ কথাটা মোটামুটি সবাই জানেন যে, তামাকজাত বস্তুর নেশা আছে যাঁদের, তাঁদের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বেশি। অনেকেই বলবেন, এগুলি স্রেফ আশঙ্কা। পরিসংখ্যান নয়। বহু মানুষ সারা জীবন সিগারেট খাওয়ার পরেও ক্যানসারে আক্রান্ত হন না। অনেকে আবার কখনও তামাকজাত বস্তু স্পর্শ না করেও কর্কটরোগের কবলে পড়েন।
কিন্তু সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণায় প্রকাশিত তথ্যগুলি পরপর সাজালে যে ছবিটা বেরিয়ে আসছে, তাতে ভুরুতে ভাঁজ পড়ার কথা। জানতে চান, কী সেই তথ্য?
. ‘ক্লিনিকোপ্যাথোলজিকাল প্রোফাইল অফ ক্যানসারস ইন ইন্ডিয়া: আ রিপোর্ট অন দ্য হসপিটাল বেসড ক্যানসার রেজিস্ট্রিস ২০২১’ শীর্ষক এই রিপোর্টটি তৈরি করেছে বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ ইনফরমেটিক্স অ্যান্ড রিসার্চ (NCDIR) নামক একটি সংস্থা। এটি ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ বা ICMR-এর একটি শাখা।
. যেভাবে গবেষণাটি হয়েছে, তাতে ভুলচুক বা গড় হিসেবের কোনও স্থান নেই। কারণ এই গবেষণায় সারা ভারতের ৯৬টি হাসপাতাল থেকে তথ্য সংগৃহীত হয়েছে। ন্যাশনাল ক্যানসার রেজিস্ট্রি প্রোগ্রামের আওতাধীন এই হাসপাতালগুলিতে গত সাত বছরে যত ক্যানসার পেশেন্ট ভর্তি হয়েছে, তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যই এই রিসার্চের ভিত্তি।
. ২০১২-২০১৯-এর মধ্যে এই হাসপাতালগুলিতে প্রায় ৬.১ লক্ষ ক্যানসার আক্রান্তের চিকিৎসা হয়েছে। এদের মধ্যে পুরুষ ৫২.৪%, মহিলা ৪৭.৬%। এর মধ্যে ২ লক্ষ বা ৩৩% ক্যানসারের প্রত্যক্ষ কারণ হচ্ছে তামাক। দক্ষিণ ভারতে তামাকের কারণে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক রোগী।
. তবে শতকরা হিসেবে যদি ধরেন, তা হলে উত্তরপূর্ব ভারতে তামাক সেবনের কারণে ক্যানসারে আক্রান্ত হয় সবচেয়ে বেশি মানুষ। সেখানে মোট যতজনের কর্কট রোগ হয়, তার ৫০.৪%-এর কারণ তামাক। এর পরেই আসবে মধ্যভারত (৪২%) ও পশ্চিম ভারতের (৩৬.৯%) পালা। সংখ্যাটা সবচেয়ে কম পূর্বে (২৫.৩%)।
. এবার সবচেয়ে জরুরি প্রসঙ্গ – এত তথ্যের কচকচি তুলে ধরার কারণটা কী? আমাদের উদ্দেশ্য খুব পরিষ্কার – আমরা বলতে চাইছি, স্রেফ তামাক থেকে দূরে থাকলে এই বিপুল সংখ্যক মানুষের ক্যানসার হতই না! বাড়ির কেউ এই রোগে আক্রান্ত হলে তাঁর পরিজনরা মোটেই ছাড় পান না। খরচ তো আছেই, তার পর টেনশন, যন্ত্রণা, হাসপাতাল মিলিয়ে ভোগান্তির একশেষ হয়।
চেষ্টা করুন তামাক থেকে দূরে থাকার। আপনি এই নেশার কবল থেকে দূরে থাকতে পারলে আপনার সন্তানও পারবে। যেটা আপনার হাতে নেই, সে বিষতে কিছু করতে পারবেন না। কিন্তু সাধ্যের মধ্যে যতটা আছে, সেটা ছাড়বেন কেন?