Sciencedirect.com-এ প্রকাশিত ২০১৫ সালের একটি সমীক্ষার হিসেব বলছে, প্রতি তিনজন প্রাপ্তবয়স্ক ভারতীয়ের মধ্যে অন্তত একজন হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় আক্রান্ত। সারা পৃথিবীতে ২০-৪৪ বছর বয়সিদের মধ্যে হাইপারটেনশনের প্রাদুর্ভাব খুব বেশি নয়, কিন্তু ভারতে তেমনটাও দেখা যায়। আরও চিন্তার বিষয় হচ্ছে, অল্পবয়সিদের মধ্যে এই প্রি-হাইপারটেনশনের সমস্যা যত দিন যাচ্ছে, বাড়ছে।
পাশাপাশি আরও বড়ো একটা সমস্যা আছে – হাই ব্লাড প্রেশার নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে, বিশেষ করে অল্পবয়সিদের মধ্যে তেমন কোনও সচেতনতা নেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোগ ধরা পড়ে দেরিতে, তা সিরিয়াসলি নেওয়া হয় না, চিকিৎসাও হয় না তেমন। সাম্প্রতিক ডেটা দেখলে এই সংখ্যাটা আরও বাড়বে হয়তো।
এবার শুনুন আরও জরুরি একটি তথ্য। আমেরিকার মেয়ো ক্লিনিক আর ভারতের ম্যাক্স হাসপাতালে কোভিড পরবর্তী জটিলতা নিয়ে আলাদাভাবে সমীক্ষা হয়েছিল। দু’টি সমীক্ষা থেকে যে কমন সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যায়, তা হল – ব্লাড প্রেশার বেশি থাকলে কোভিডের কারণে হওয়া নানা সমস্যা আরও জটিল আকার ধারণ করে, লং-কোভিড বেশিদিন ভোগায়।
তাছাড়া, মাত্রাতিরিক্ত রক্তচাপের সঙ্গে যোগাযোগ আছে আরও অন্তত বেশ কয়েকটি শারীরিক সমস্যার, তার মধ্যে পড়বে –-
. অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রোম
. অ্যানিমিয়া
. অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দনের হার
. করোনারি আর্টারি ডিজিজ
. কিডনির সমস্যা
বিজ্ঞানীরা বলেন, রক্তের চাপ বেশি থাকলে আমাদের কোষগুলি ধীরে ধীরে ড্যামেজড হতে আরম্ভ করে। কোষের ক্ষতি হচ্ছে দেখে লোকালি ইমিউন রেসপন্স তৈরি হয়। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে কিডনিতে সমস্যা শুরু হতে পারে, হার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে। হাইপারটেনশন থাকা মানেই শরীরে ইনফ্ল্যামেশন বাড়বে। সেই কারণে হার্ট আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবেই, আপনার প্রতিরোধক্ষমতাও কাজ করবে না ঠিকভাবে।
হাইপারটেনশন নিয়ন্ত্রণে রাখার সহজ উপায়গুলি কী?
. ওজন বাড়তে দেওয়া চলবে না। সাধারণত দেখা যায় যে বাড়তি ওজনের সঙ্গে সঙ্গে এই সমস্যাগুলি গভীরভাবে যুক্ত।
. আপনাকে অ্যাকটিভ থাকতে হবে – নিয়মিত ব্যায়াম করলে অ্যাক্টিভিটি বাড়ে। আপনি যদি গাড়ি চড়া কমিয়ে হাঁটার পরিমাণ বাড়ান, তা হলেও অ্যাক্টিভিটি বাড়বে। নির্দিষ্ট একটা সময় বের করে নিয়ে বাড়ির ছাদে বা পাড়ার পার্কে হেঁটে আসুন। ফুটবল, ক্রিকেট খেলা, যোগাসন, স্কিপিং, সাইক্লিং, সাঁতার সবই আপনাকে সচল রাখবে — জিমে যাওয়ার সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই।
. সুষম, পুষ্টিকর খাবার খান। হাইপারটেনশন কমাতে গেলে খাবার থেকে বাড়তি সোডিয়াম ছেঁটে ফেলতে হবে। তেল, ভাজাভুজিও চলবে না। বেশি করে ফল, শাকসবজি খান। খাবারে যেন ফাইবার বেশি থাকে। দরকারে ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে চলতে হবে।
. স্ট্রেস কমাতে হবে। মেডিটেশন বা প্রাণায়াম স্ট্রেস কমাতে দারুণ কার্যকর। নিয়মিত ব্যায়াম করলেও মানসিক চাপ কমে।
. খুব বেশি চা, কফি, মদ্যপান চলবে না। ধূমপান ছাড়ার চেষ্টা করুন।