কী বললেন, আপনি জানেনই না ‘স্কুইড গেম’ কী? সর্বনাশ! সারা পৃথিবীতে হাতে গোনা কয়েকজন মানুষ এখনও স্কুইড গেমের নাম শোনেনি, আপনি তাদেরই একজন দেখা যাচ্ছে! নেটফ্লিক্সের ইতিহাসে এতদিন পর্যন্ত যে সব শো মুক্তি পেয়েছে, দর্শকের বদান্যতায় সেই তালিকার একেবারে শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছে মাত্র দুই মাস আগে মুক্তি পাওয়া এই সাউথ কোরিয়ান ড্রামা।
পাশাপাশি সোশাল মিডিয়া জুড়ে অসংখ্য মিম আর রিল তৈরি হয়েছে স্কুইড গেম নিয়ে, আর কে না জানে – আজকের যুগে দাঁড়িয়ে জনপ্রিয়তা মাপার অন্যতম সেরা উপায় হচ্ছে মিম এবং শর্ট ভিডিয়োর উপাদান হয়ে ওঠা।
দক্ষিণ কোরিয়ার শিল্প নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরেই আগ্রহ তৈরি হয়েছে। ২০১৯ সালে অস্কারের আসর মাতিয়ে দিয়েছিল সে দেশের ছবি ‘প্যারাসাইট’। কে-পপ ব্যান্ড ‘বিটিএস’ জনপ্রিয়তাও দুনিয়াজোড়া। তবে ‘স্কুইড গেম’ যেভাবে গোটা পৃথিবীর অল্পবয়সিদের ঘুম কেড়ে নিয়েছে, তেমনটা চট করে দেখা যায় না।
যাঁরা ‘হাঙ্গার গেমস’ সিরিজের ছবিগুলি দেখেছেন, তাঁরা স্কুইড গেমের পটভূমিকাটা চট করে ধরতে পারবেন। বিরাট মূল্যের পুরস্কারের জন্য লড়াইয়ে নেমেছে বেশ কিছু মানুষ – প্রত্যেকেই আকণ্ঠ ঋণে ডুবে আছে। গেম শোয়ের নিয়ম মেনে ধাপে ধাপে এগোবে কিছু লোক — যারা পারবে না, তাদের ভাগ্যে নাচছে মৃত্যু।
অতিমারি পরিস্থিতিতে ঋণের চাপে জর্জরিত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। সব থেকে খারাপ অবস্থা দক্ষিণ কোরিয়ার নিজেরই। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের হাতে কাজ নেই, কিন্তু বেঁচে থাকতে গিয়ে ধার করতে হচ্ছে বিরাট টাকা। দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতি নিয়ে যাঁদের আগ্রহ আছে, তাঁরা জানেন যে সে দেশে বহু মানুষ ছোটোখাটো ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু ব্যবসা ফেল করলে সরকার দায় নেয় না। তার চেয়েও বড়ো কথা, সে দেশে ব্যবসার দায় আর ব্যক্তিগত দায়ের মধ্যে ফারাক নেই।
মানেটা বুঝলেন? ধরুন, আপনি একজন ব্যবসায়ী – কোনও প্রকল্পের জন্য ঋণ নেবেন। ব্যাঙ্ক ব্যবসার ডেবিট-ক্রেডিট তো দেখবেই, জামিন হিসেবে আপনার ব্যক্তিগত সম্পত্তিও তাদের হাতের মুঠোয় থাকবে। ব্যবসা ফেল করলে আপনি গা বাঁচাতে পারবেন না, দেউলিয়া হয়ে যাবেন। মনে রাখবেন, আমাদের দেশেও বহু ব্যবসায়ী আছেন যাঁদের এক-আধটা প্রজেক্ট ফেল করে – তাতে কিন্তু তাঁদের বাকি ব্যবসার গায়ে আঁচ লাগে না। কোরিয়ায় কোনও ব্যবসায়ী একবার নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করলে না পান নতুন ঋণ, না জোটে কোনও ভদ্রস্থ চাকরি।
এই দুষ্টচক্র অতিমারির আবহে আরও দুঃসহ হয়ে উঠেছে। সেই পরিস্থিতিতে ‘স্কুইড গেম’-এর সঙ্গে একাত্মবোধ করতে পারছেন তরুণরা। গোটা পৃথিবীর ছবিটাই মোটামুটি এক – অর্থের নেশায় জ্ঞান হারিয়ে সবাই কম-বেশি ছুটছে। না হলে বেঁচে থাকা দুষ্কর।
View this post on Instagram
তা ছাড়াও স্কুইড গেমে যে কালার স্কিম ব্যবহার করা হয়েছে, তা খুব নজরকাড়া। দক্ষিণ কোরিয়ায় ‘রেড লাইট/ গ্রিন লাইট’ গেমও খুব জনপ্রিয় – এমন বাচ্চা পাওয়া যাবে না যে ছেলেবেলায় এই খেলাটা খেলেনি। এই সব ছোটো ছটো এলিমেন্টের পাশাপাশি রয়েছে জাপানি অ্যানিমে ও মাঙ্গা সিরিজের মতো ভায়োলেন্সের প্রভাব। তা দেশ কালের সীমানা ছাড়িয়ে ভালো লাগছে সবারই।