গোয়াগামী এক প্রমোদতরী থেকে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে পার্টি করার সময় ড্রাগসহ ধরা পড়ে সংবাদের শিরোনামে এসেছেন শাহ রুখ খানের পুত্র আরিয়ান খান। তাই নিয়ে গোটা দেশে ছিছিক্কার পরে গিয়েছে একেবারে। ব্যাপারটা নিয়ে যতটা শোরগোল হচ্ছে, আসলে কিন্তু ততটা আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই, কারণ অল্পবয়সিদের সাবস্ট্যান্স অ্যাবিউজ ক্রমশ বাড়ছে।
কেবল অগাধ পয়সা আর ক্ষমতা থাকলেই মানুষ ড্রাগের নেশা ধরে, এমনটা ভেবে বসে থাকবেন না। আপনার পাশের টেবিলে বসে কাজ করা সহকর্মী, পাশের ফ্ল্যাটের মিষ্টি মেয়েটি বা জিমের এক্সারসাইজ পার্টনারও এ ধরনের নেশায় আসক্ত হতে পারেন। মদের তাও গন্ধ থাকে, শুকনো নেশায় সে সবেরও পাট নেই, তাই অনেকেই সেদিকে ঝোঁকেন।
ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষায় খারাপ ফল হলে, চাকরি ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা থাকলে, দীর্ঘদিন সম্পর্কের টানাপোড়েন চললেও কিন্তু তা আসক্তির ক্ষেত্রে ট্রিগার হিসেবে কাজ করতে পারে। এখন কোভিড ও রিসেশনের কারণে এর প্রত্যেকটির আশঙ্কাই অনেকগুণ বেড়ে গিয়েছে। তাই বাড়ছে অ্যাডিকশনও। অসহায় অবস্থায় মানুষ আশ্রয় খোঁজে। সেটা কোনও মানুষের কাছে না পেলে সাবস্ট্যান্স অ্যাবিউসের দিকেই যেতে পারে মানুষ।
পরিচিত কোনও মানুষ কোনও নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছেন কিনা, তা বোঝার কতগুলো লক্ষণ আছে। যাঁদের পরিবারে স্কুলের উঁচু ক্লাসে পড়া বা কলেজপড়ুয়া ছাত্রছাত্রী আছে, তাঁরা সতর্ক নজর রাখুন। খবরের দিকে চোখ রাখলেই জানতে পারবেন, যে কোনও রাজ্যের বড়ো স্কুল-কলেজের সামনেই ড্রাগ পেডলারদের আড্ডা থাকে। আর ভিডিও গেমে মাত্রাতিরিক্ত আসক্তির ঘটনা তো নিত্যদিন ঘটছে। তাই বিপদে গলা পর্যন্ত ডোবার আগে সাবধান হোন।
. প্রথম পরিবর্তনটা ধরা পড়বে ব্যবহারে। সামান্য সিগারেটের আসক্তি তৈরি হলেই মানুষ আড়াল খোঁজে সুখটান দেওয়ার জন্য। মদের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা তাই হয়। অনেক বেশি মাত্রায় ব্যবহারিক পরিবর্তন দেখা দেয় ড্রাগ বা কোনও রাসায়নিক নেশা বা ভিডিও গেম-জুয়ার ক্ষেত্রে।
. মিথ্যে বলা বা আড়াল খোঁজার পাশাপাশি দেখা দেয় মনঃসংযোগের সমস্যা। ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ার রেজাল্ট খারাপ হতে আরম্ভ করে।
. নেশায় আসক্ত হলে চেহারা ক্রমশ খারাপ হতে থাকে, নিজের দিকে নজর দেওয়ার সময় থাকে না মানুষের। সেই সঙ্গে নেশার ঘোরে তারা অনেক সময়েই এমন কিছু করে ফেলে যা হয়তো স্বাভাবিক অবস্থায় করত না। তবে যারা খুব সতর্ক, তারা মেকআপের সাহায্যে এ সব বদল ঢেকে রাখতে পারে।
. অনেক ক্ষেত্রে গায়ে-হাতে চোট দেখতে পাবেন, যার কোনও যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা মিলবে না। ধীরে ধীরে চেনা মানুষটা আপনার চোখের সামনে অচেনা হতে আরম্ভ করবে।
. সমস্যা হচ্ছে, চট করে কোনও অ্যাডিক্ট চিকিৎসা করাতে রাজি হয় না। জোরজার করে তেমন ফল পাবেন না, আপনাকে তার বিশ্বাস অর্জন করতে হবে, প্রতি মুহূর্তে পাশে থাকতে হবে। ডাক্তার ও কাউন্সেলারের সাহায্য নিন। সামাজিক বদনামের ভয় পাবেন না, প্রিয়জনের পাশে থাকুন। অ্যাডিকশন কাটাতে অনেকদিন সময় লাগে – রাতারাতি ফলের আশা না করলেই ভালো করবেন।