টানা তিনমাস ঘরবন্দি থাকার পর আনলকের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ঠিকই, কিন্তু যা বোঝা যাচ্ছে তাতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে এখনও অনেক সময় লাগবে।
দায়ে পড়ে মানুষ কাজেকর্মে বেরোতে শুরু করেছেন বটে, তবে খুব প্রয়োজন না পড়লে ঘরের বাইরে বেরোতে চাইছেন না এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয়।
এই গোটা লকডাউন ও তার পরবর্তী সময়ে যে বিষয়টা সারা দেশের একটা স্থিরচিত্র হিসেবে উঠে এসেছে, তা হল গৃহহিংসা। সারা দেশ জুড়ে ক্রমশই বাড়ছে গার্হস্থ্য হিংসার পরিসংখ্যানের হার। জাতীয় মহিলা কমিশনের কাছে দেশের বিভিন্ন অংশ থেকে গার্হস্থ্য হিংসার ভুরি ভুরি অভিযোগ জমা পড়ছে।
জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রধান রেখা শর্মা জানাচ্ছেন, লকডাউন চলাকালীন গৃহহিংসার অভিযোগ বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
সবচেয়ে বেশি ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের অভিযোগ জমা পড়েছে উত্তর ভারত, বিশেষ করে পঞ্জাব থেকে। রেখা বলেছেন,”বাড়িতে বসে থেকে থেকে পুরুষেরা হতাশ হয়ে পড়ছেন আর সেই হতাশা তাঁরা উগরে দিচ্ছেন মেয়েদের উপর।”
জাতীয় স্তরে যখন এই অবস্থা, তখন কেমন আছে রাজ্যগুলো? একাধিক রাজ্য মহিলা কমিশনের পক্ষ থেকেও গৃহহিংসা বৃদ্ধির কথাই বলা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গও তার ব্যতিক্রম নয়।
লকডাউনের প্রথম পর্যায়ে অবশ্য পশ্চিমবঙ্গের ছবিটা অন্যরকম ছিল। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের অভিযোগ জানানোর যে নম্বর দেওয়া থাকে রাজ্য মহিলা কমিশনের পক্ষ থেকে, লকডাউনের প্রথম পর্যায়ে সেখানে ফোন অনেক কম আসছিল। লীনার ধারণা ছিল হয়তো বিভিন্ন কারণে মেয়েরা অত্যাচারিত হওয়ার খবর দিতে পারছেন না।
তাঁর ধারণা সত্যে পর্যবসিত হতে বেশি সময় লাগেনি। গার্হস্থ্য হিংসার ঘটনা মে মাসেই অনেকটা বেড়ে গিয়েছিল। তারপর লকডাউনের বাকি সময়টাতেও লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে গৃহহিংসার ঘটনা।
লীনা জানিয়েছেন, পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে থাকা যে সবসময় সুখকর হচ্ছে, তা নয়। গৃহবন্দি হয়ে থাকার সুবাদে পুরুষদের মধ্যে একটা হতাশা তৈরি হচ্ছে আর তার জের গিয়ে পড়ছে বাড়ির মেয়েদের ওপর।
লকডাউনের জন্য বাড়তি কোনও অসুবিধে হচ্ছে কি? লীনা বলছেন, “প্রথম অসুবিধে হল আমরা মুখোমুখি বসতে পারছি না। আমরা তো প্রথম থেকেই পুলিশি ব্যবস্থা নেওয়ার পথে হাঁটি না, আমাদের নিজস্ব কাউন্সেলিং সেল আছে। কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে আমরা সমস্যা মিটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি।”
কিন্তু পুরোনো কেসগুলোয় যথাবিহিত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, প্রয়োজনমতো পুলিশের সাহায্যও নেওয়া হয়েছে বলে জানাচ্ছেন লীনা। পরিস্থিতি একেবারে স্বাভাবিক হয়ে গেলে গৃহহিংসার প্রতিটি ঘটনায় যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন রাজ্য মহিলা কমিশনের নেত্রী।