কলকাতা পুলিশের হিসেব বলছে, গত ১২-১৩ দিনে রাস্তায় অহেতুক হর্ন বাজানোর অপরাধে জরিমানা করা হয়েছে হাজার তিনেকের কাছাকাছি ড্রাইভারকে! নিয়ম লঙ্ঘনের দৈনিক সংখ্যা অন্ততপক্ষে ২০০। লকডাউন ইত্যাদি লাগু হওয়ার আগে যখন স্বাভাবিক গাড়িঘোড়া চলত, তখনও দিনে গোটা ৪০-এর বেশি অভিযোগ জমা পড়ত না পুলিশের কাছে।
সবচেয়ে বেশি আইন অমান্যের ঘটনা রিপোর্ট করেছে শিয়ালদহ ট্র্যাফিক গার্ড। অথচ এই অঞ্চলের অনেকটাই মোটর ভেহিক্যালস অ্যাক্ট অনুযায়ী ‘সাইলেন্স জোন’-এর মধ্যে পড়ে। কোনও হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কোর্ট, ধর্মস্থানের ১০০ মিটারের মধ্যে হর্ন বাজানো যায় না, যদি না একান্ত আপৎকালীন পরিস্থিতি তৈরি হয়।
শিয়ালদহ ট্র্যাফিক গার্ডের আওতায় আছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের একাংশ, এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, বিআর সিং হাসপাতাল, আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতাল, কলকাতা ও প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, অজস্র স্কুল ও কলেজ, শিয়ালদহ কোর্ট ও একাধিক ধর্মস্থান।
ট্র্যাফিক গার্ডের এক আধিকারিক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, রাস্তায় এখন গাড়ি খুব বেশি নেই। তা সত্ত্বেও বেড়েছে অহেতুক হর্ন বাজানোর প্রবণতা। গাড়ি চলাচল মোটামুটি স্বাভাবিকের দিকে যাওয়ার পর দেখা যাচ্ছে ড্রাইভারকে নিয়মকানুন ভুলতে বসেছেন — হাসপাতালের সামনেও তারস্বরে হর্ন বাজানো হচ্ছে নির্দ্বিধায়। তাই ট্র্যাফিক পুলিশকেও বাধ্য হয়ে কঠোরভাবে বিধি প্রয়োগে উদ্যোগী হতে হয়েছে।
এবার একটা জরুরি বিষয় জেনে রাখুন। গাড়ি চালাতে গিয়ে অহেতুক যাঁরা হর্ন বাজান, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে তাঁরা মানসিক চাপের শিকার। অল্প সমস্যাতেই তাঁরা মাথা গরম করে ফেলেন, ফলে অ্যাক্সিডেন্টের আশঙ্কা বাড়ে। অতিমারি, উপর্যুপরি লকডাউনের চাপ, চরম অনিশ্চয়তার আবহে মানুষের স্ট্রেস অনেকটাই বেড়েছে, সম্ভবত তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটছে রাস্তাতেও।
আর একটা বিষয় আছে — বহু মানুষ সাইকেল চালিয়ে যাতায়াত করছেন, সদ্য লাইসেন্স পেয়েই স্কুটি বা বাইক চালাচ্ছেন অনেকে। আর সেই নব্য শিক্ষিত চালক ও ত্রস্ত পথচারীদের সামলে গাড়ি চালাতে সত্যিই অসুবিধে হচ্ছে হয়তো! কারণ যাই হোক, নিয়ম কিন্তু মানতেই হবে।
. অহেতুক গাড়ির হর্ন বাজালে বাড়ে শব্দদূষণ। তার থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শ্রবণযন্ত্র। আর সবচাইতে বড়ো সমস্যা হল, ড্রাইভার নিজে অনেক সময়েই বোঝেন না সমস্যাটা কোথায় হচ্ছে। তাই যিনি গাড়ি চালাচ্ছেন না, তিনি সতর্ক থাকুন, অন্তত সাইলেন্স জোনে যেন হর্ন না বাজানো হয় সেটা দেখতে হবে।
. হর্ন বাজানো নিয়ে কিন্তু রাস্তায় অন্য গাড়িচালকের সঙ্গে ঝগড়াও বেধে যেতে পারে। তাই মাথা ঠান্ডা রাখাটা খুব জরুরি।
. যাঁরা বাইকে শখ করে মডিফায়েড সাইলেন্সার লাগিয়েছেন এবং কার্যক্ষেত্রে পিলে চমকে দেওয়ার মতো আওয়াজ বের হয় – তাঁরা সতর্ক থাকবেন। কলকাতা পুলিশের সার্জেন্টের হাতে ধরা পড়লে কিন্তু ২০০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত ফাইন দিতে হতে পারে!
. ইলেকট্রনিক মাল্টিসাউন্ড হর্ন আর এয়ারহর্ন কিন্তু ব্যান করে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ ধরলে বিস্তর ক্ষতিযোগ আছে।