গত বছর যখন করোনা ভাইরাস ধীরে ধীরে নিজের উপস্থিতি জানান দিল এবং গোটা দুনিয়ায় দাপটের সঙ্গে ত্রাস সৃষ্টি করতে সক্ষম হল, তখনও একটি বিষয়ে নিশ্চিন্ত হয়েছিলেন সাধারণ মানুষ। কোভিড শিশুদের সেভাবে কাবু করতে পারেনি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের খুব সামান্য উপসর্গ দেখা দিয়েছিল, দু’ একদিনের মধ্যেই আবার সব স্বাভাবিক হয়ে যায়।
সেকেন্ড ওয়েভের শুরু থেকেই কিন্তু বোঝা গিয়েছে যে, ভাইরাসের চরিত্রে মিউটেশনের ফলে কিছু পরিবর্তন এসেছে এবং এই নতুন স্ট্রেন বাচ্চাদেরও বাদ দিচ্ছে না। ইতালি, জার্মানি, ইংল্যান্ড, ফ্রান্সেও প্রচুর বাচ্চা আক্রান্ত হয়েছে কোভিডে এবং পরিস্থিতি কঠিন হওয়ায় হাসপাতালেও ভর্তি করতে হচ্ছে বাচ্চাদের।
সমস্যা হচ্ছে, শিশুদের ক্ষেত্রে কোভিডের আদর্শ ট্রিটমেন্ট কীভাবে হওয়া উচিত সে সংক্রান্ত কোনও প্রোটোকল এখনও নেই। লক্ষণ দেখে সেই বুঝে চিকিৎসা হচ্ছে। তার চেয়ে বড়ো সমস্যা হচ্ছে, কোভিড পরীক্ষার জন্য যেভাবে মুখগহ্বর ও নাক থেকে লালা সংগ্রহ করা হয়, তা করতে গেলেই বাচ্চারা বাধা দিচ্ছে, কান্নাকাটি করছে। ফলে অনেকেরই লক্ষণ থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষার ফল নেগেটিভ হচ্ছে। সেক্ষেত্রে একটি শিশুই হয়ে দাঁড়াচ্ছে সুপার স্প্রেডার – পুরো পরিবার আক্রান্ত হচ্ছে অসুখে।
. বাচ্চাদের ক্ষেত্রে জ্বর বা কাশির পাশাপাশি পেটে ব্যথা, ডায়েরিয়া, মুখে ঘা, বারবার জিভ শুকিয়ে যাওয়া, চোখ লাল হওয়ার মতো লক্ষণগুলিও থাকছে। এর মধ্যে কোনওটি দেখতে পেলেই সতর্ক হোন এবং ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
. আপাতত পার্কে বা বাড়ির বাইরে খেলতে যাওয়া বন্ধ করে দিন, বাইরে কোনও কারণে বেরোতে হলেও বাচ্চাকে মাস্ক পরতেই হবে।
. ছোটোদের আইসোলেট করে রাখা মুশকিল, তাই বাড়ির বড়োদের রিভার্স আইসোলেশনে পাঠান, বিশেষ করে যদি বাড়িতে বয়স্ক কেউ থাকেন, তা হলে তো মানতেই হবে নিয়ম।
. সমস্ত কোভিড প্রোটোকল মেনে চলা একান্ত প্রয়োজনীয়। বাচ্চার হাত বার বার ধুয়ে দিন। খুব কাশি হলে ছোটো শিশু হয়তো মাস্ক পরে থাকতে চাইবে না – তার আশেপাশে যাঁরা থাকবেন, তাঁদের বাড়তি সাবধানতা নিতে হবে।
. আগে থেকেই প্যানিক করবেন না, ডাক্তারের কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলুন।
. বাচ্চার রোজের ডায়েট যেন পুষ্টিকর হয়, তা দেখতে হবে। দরকারে চকোলেট, চিপস, কেক, কুকি খাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি করুন। বাড়িতে সফট ড্রিঙ্কের বোতল রাখবেন না, কথায় কথায় পিজা, প্যাটিস, পেস্ট্রি খাওয়ার অভ্যেসেও রাশ টানুন।
. বাচ্চাদের ইমিউনিটি বেশি হয়, তাই অনেক সংক্রমণ থেকে তারা সহজে মুক্তি পেয়ে যায়। কিন্তু নিরাপত্তার কথা ভাবলে সতর্ক হোন, ১৪ দিনের নিভৃতবাস মেনে চলুন।