মার্চে যখন গোটা দুনিয়া জুড়ে লকডাউন শুরু হল, তখন আর পাঁচজনের মতো খেলোয়াড়রাও পড়েছিলেন মহা দুশ্চিন্তায়। দিনের পর দিন ঘরে বসে থাকা, কবে আবার মাঠে নামা যাবে সে নিশ্চয়তা একেবারেই নেই – ফিটনেসের কী হবে? অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে গেল আইপিএল, বাতিল হল টোকিও অলিম্পিকস। টেনশন বাড়ছিল ক্রমশ। কবে খেলা শুরু হবে, তার কোনও স্থিরতা নেই – স্পনসররাও ব্যবসার হাল খারাপ বলে সেরে দাঁড়াচ্ছেন একের পর এক – চলবে কী করে এভাবে?
এপ্রিল-মে পর্যন্ত সমস্ত খেলা বাতিল হয়ে গেল একের পর এক। যেহেতু মানুষ ঘরে বসে টিভিতেই খেলা দেখছিলেন বেশি, তাই চ্যানেলগুলি পুরোনো খেলাই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখাতে আরম্ভ করল। মে মাস নাগাদ প্রথম আশার কথা শোনা গেল জার্মানি থেকে – সরকার অনুমতি দিলে বায়ো সিকিওরড বাবল পদ্ধতিতে শুরু হতে পারে সে দেশের ফুটবল লিগ বুন্দেশলিগা।
কাকে বলে বায়ো সিকিওরড বাবল? প্রথমত, কোনও ভেনুতে দর্শকের প্রবেশ নিষেধ। থাকবেন কেবল খেলোয়াড়, সাপোর্ট স্টাফ আর ম্যাচ অফিশিয়ালরা। ইভেন্ট শুরুর ১৪ দিন আগে থেকে তাঁদের চলে আসতে হবে নির্দিষ্ট হোটেল বা রিসর্টে, সেখানেই কোয়ারান্টাইন করে থাকতে হবে। প্র্যাকটিস চলবে সেখান থেকেই। এই পুরো পর্যায়ে বাইরের কারও সঙ্গে মেলামেশা চলবে না, বার বার করোনা পরীক্ষা করাতে হবে। রিপোর্ট নেগেটিভ এলে তবেই খেলার ছাড়পত্র মিলবে। সেই সঙ্গে মানতে হবে আয়োজকদের নির্দেশ। খেলা দেখা যাবে টিভিতে বা স্পোর্টস চ্যানেলের অ্যাপের মাধ্যমে।
বুন্দেশলিগা সত্যি শুরু হয়ে গেল। তার পর ইংল্যান্ড, ইতালি, স্পেনেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করে খেলা হতে আরম্ভ করল। মাঝে একটা বড়ো হোঁচট খেল তারকা টেনিস প্লেয়ার নোভাক জকোভিচ আয়োজিত আদ্রিয়া টেনিস ট্যুর নামক টুর্নামেন্ট। জকোভিচের আমন্ত্রণে সারা দুনিয়া থেকে বেলগ্রেডে উড়ে এসেছিলেন বহু স্টার খেলোয়াড়, মাঠ ভরে এসেছিলেন দর্শক। কার্যত এই টুর্নামেন্ট করোনা হটস্পট হয়ে দাঁড়াল – সস্ত্রীক জকোভিচসহ একের পর এক খেলোয়াড় করোনা পজিটিভ হওয়ার পর টুর্নামেন্টের ফাইনালটাই বানচাল হয়ে গেল।
কিন্তু একটা ব্যাপার স্পষ্ট হয়ে গেল এই দুর্ঘটনায়। সব নিয়ম মানতে হবে অক্ষরে অক্ষরে। ধীরে ধীরে মাঠে ফিরতে আরম্ভ করলেন রোনাল্ডো, মেসি, বিরাট কোহলিরা। দর্শকহীন মাঠে আইপিএল করা উচিত কিনা, তা নিয়ে শুরু হল বিতর্ক। এর মাঝেই জুলাই মাসে হয়ে গেল ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট সিরিজ। সমস্ত সতর্কতা মেনে লা লিগা, চ্যাম্পিয়ানস লিগও চলছে। আইপিএল হল আরব আমিরশাহীতে, সমস্ত সতর্কতা মেনে এবং খুব সফলভাবে।
সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছরের গ্রীষ্মকালে অনুষ্ঠিত হবে টোকিও অলিম্পিক – তবে তার আগে ভ্যাকসিন বাজারে আসা জরুরি। পুরোদমে চালু হয়ে গিয়েছে তার প্রস্তুতি, একের পর এক খুলছে অনুশীলন শিবির। সাঁতারের মতো কিছু খেলা নিয়ে এখনও দ্বিধা থাকলেও বাকি সব স্পোর্টস যে করোনা ভাইরাসকে হারিয়ে দিয়েছে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই!
ফোটো: ইনস্টাগ্রাম