সারা দুনিয়ায় এখন কোভিডের তৃতীয় ঢেউ শুরু হয়ে গিয়েছে, এ নিয়ে মনে কোনও সন্দেহ রাখবেন না। আগের দু’বার গোড়ায় আমরা ব্যাপারটাকে পাত্তা দিইনি, মনে হয়েছিল তা আমাদের স্পর্শ করবে না। কিন্তু আদতে কি হয়েছিল, তা মনে আছে নিশ্চয়ই? তাই সময় নষ্ট না করে উঠে-পড়ে লেগে পড়ুন!
রাষ্ট্রপুঞ্জের ওয়েবসাইট বলছে, বিগত চার সপ্তাহ ধরে সারা দুনিয়ায় কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা ধীর গতিতে হলেও ফের বাড়ছে। বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। তার আগের ১০-১২ সপ্তাহ কিন্তু সংখ্যাটা ক্রমশ কমছিল। ঠিক কোন কারণে এই উলটপুরাণ সম্ভব হল?
১. মানুষ ফের ঘোরাফেরা শুরু করেছে, বিভিন্ন দেশে লকডাউন তুলে নেওয়া হয়েছে ধাপে ধাপে। মনে রাখবেন, কোনও দেশের সরকারই সাধারণ মানুষকে বন্দি করে বা না খাইয়ে মেরে ফেলার জন্য লকডাউন করেনি, মূল উদ্দেশ্য ছিল সংক্রমণের সংখ্যা কমানো। সেই টার্গেট পূর্ণ হওয়ায় লকডাউন তুলে নেওয়া হয়েছে, জারি আছে কিছু বিধিনিষেধ। তবে সে সবে তোয়াক্কা না করেই মানুষ ফের বেড়াতে যাওয়া, পার্টি করা শুরু করে দিয়েছে।
রমজানের সময় সব বিধিনিষেধ অগ্রাহ্য করে ইন্দোনেশিয়ার মানুষ বাজার-দোকান সেরেছেন, ইদে বেড়াতে গিয়েছেন আগের মতোই। তার ফলে এখন সে দেশে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে প্রায়, হাসপাতালে জায়গা নেই, মানুষ বাড়িতে বেঘোরে মরে পড়ে থাকছে!
তাই বার বার বলা হচ্ছে, অপ্রয়োজনে বাড়ির বাইরে বেরোবেন না, এখনও প্রমোদভ্রমণের সময় আসেনি। কাজে ফিরুন, আত্মীয়স্বজনের বিপদে পাশে দাঁড়ান। কিন্তু নিয়ম ভাঙবেন না। তা হলে তৃতীয় ওয়েভের ভয়াবহতা কিছুতেই ঠেকানো যাবে না।
২. ভাইরাসের মিউটেশন চলছেই। এখন সবচেয়ে শক্তিশালী স্ট্রেন ডেল্টা, তার উপস্থিতি রয়েছে বিশ্বের ১১১টি দেশে। অস্ট্রেলিয়ায় ডেল্টার দাপট প্রশাসনের ঘুম কেড়েছে। সেখানে গত পাঁচদিন ধরে চলছে লকডাউন। কিছুদিনের মধ্যে আরও শক্তিশালী ভ্যারিয়ান্ট হাজির হলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। এই পরিস্থিতিতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভ্যাকসিনেশনের কাজ শেষ করতে হবে সারা দুনিয়ায়।
আমরা সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণের থেকে সহস্র যোজন দূরে আছি – বিশেষ করে আফ্রিকার দেশগুলির অবস্থা সবচাইতে শোচনীয়। WHO প্রধান টেড্রস আধানোম গেব্রেসিয়াস বার বার উন্নত ও অর্থবান দেশগুলিকে অনুরোধ করছেন দরিদ্র দেশের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য। সে কথায় উন্নত বিশ্ব কর্ণপাত করছে না। ফলে ভাইরাস আরও শক্তি বাড়াতে পারে আগামী দিনে। টিকা নিন, যাঁরা নিতে চাইছেন না, তাঁদের বুঝিয়ে নিয়ে যান নিকটতম স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।
৩. স্রেফ টিকা নিলেই চলবে না। মেনে চলতে হবে নানা কোভিড বিধি। ভিড়ের মধ্যে যাওয়া চলবে না। হাত ধুতে হবে, বাইরে থেকে ফিরে পোশাক বদলান, জুতো রাখুন ঘরের বাইরে। বাইরে গেলে মাস্ক পরুন, কোভিড বিধি বজায় রাখুন। জ্বর-সর্দি-কাশি ইত্যাদি হলে সেলফ আইসোলেশনে থাকুন, বাড়ির অন্য সদস্যদের কাছে যাবেন না।