বাড়ছে পৃথিবীর তাপমাত্রা, ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে আবহাওয়া। কানাডা, উত্তর আমেরিকার যে সব এলাকা ঠান্ডায় কাঁপত এক কালে, জুন মাসের শেষে সেখানে তাপমাত্রা গিয়ে পৌঁছেছে ৪৫-৪৬ ডিগ্রিতে। একই অবস্থা স্পেনসহ ইউরোপের নানা এলাকাতেও। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দাবানলের প্রকোপ। জ্বলে-পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে মাইলের পর মাইল বনভূমি।
গলছে উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর হিমবাহ – ফলে সমুদ্রের জলস্তর বাড়ছে। বুঝতেই পারছেন, তার কারণে বন্যার আশঙ্কাও বেড়েছে। তার সঙ্গে আবার যোগ হয়েছে চাঁদের চলনজনিত এক বিশেষ ঘটনা, যাকে বিজ্জানীরা বলেন ‘wobble’। নাসার সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, প্রতি ১৮.৬ বছরে একবার চাঁদ তার গতিপথে এমন এক জায়গায় আসে যখন তার আকর্ষণে পৃথিবীর জোয়ারের উচ্চতা বেড়ে যায়। আগামী ২০৩০-এর মধ্যে চাঁদ সেই জায়গায় পৌঁছে যাবে।
ফলে জোয়ারের উচ্চতা সে সময়ে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকবে। নাসার গবেষণা বলছে, অন্তত ২ মিটার বেড়ে যেতে পারে জলের উচ্চতা। পাশাপাশি আরও ৯-১০ বছর বাদে সমুদ্রের জলতলের উচ্চতাও আরও অনেকটাই বেড়ে যাবে – এই দুইয়ের মিলিত প্রভাবে বিপুল বন্যা দেখা দেবে। সমুদ্রতলের প্রাণি ও উদ্ভিদজগত তো বটেই, সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চলের বাসিন্দারাও পড়বেন মহা বিপদে।
নাসার এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত অন্যতম প্রধান বিল নেলসনের বক্তব্য, উপকূল এলাকা ও দ্বীপভূমির বাসিন্দারা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন চাঁদের এই চলন ও মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে। এর আগেও এমন wobble হয়েছে, কিন্তু তখন উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রের জল এত বাড়েনি। বন্যার জল চাষের জমি, মাছের ভেড়িতে ঢুকে পড়লে স্থানীয় মানুষের জীবন ও জীবিকা নিয়ে সংশয় তৈরি হবে। বহু মানুষ হারাবে তাদের ভিটেমাটি, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার প্রয়োজন হয়ে পড়বে। বাড়বে উদ্বাস্তু সমস্যা।
এই পরিস্থিতি ঠেকানোর কোনও উপায় আছে কি? প্রাকৃতিক ঘটনাক্রমকে বদলে দেওয়ার সামর্থ্য কারও নেই। তবে সমুদ্রের জলস্তর বাড়ার হার কমানো সম্ভব। তাপ নির্গমণ কমাতে হবে, কমাতে হবে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার। এসি, কুলার, রেফ্রিজারেটর, হিটার বন্ধ তো করা যাবে না, তবে কমানোর চেষ্টা করতে হবে। গাছ কাটা চলবে না, উলটে বনসৃজনের কাজ চালাতে হবে সরকারি-বেসরকারি সব স্তরেই।
একটা অতিমারি এসেই তো সভ্যতার ভিত নড়বড়ে করে দিল। এর পর প্রাকৃতিক দুর্যোগের মার সামলানোর মতো ক্ষমতা কি আর থাকবে? তার চাইতে আজ থেকেই সচেতন হয়ে ওঠার চেষ্টা করাটা সহজ হবে না?