দেশে করোনা ভাইরাসের দাপট ক্রমশ কমছে দেখেও সরকারি তৎপরতায় সামান্য ঢিলেমি দিতে চায় না প্রশাসন, তারা সতর্ক করেছে সাধারণ মানুষকেও। ধীরে ধীরে নিয়মকানুন শিথিল করা হলেই পূর্ণ জীবনীশক্তি নিয়ে যদি আগের জীবনে ফেরত যাওয়ার চেষ্টা শুরু করা হয়, তা হলে বিপদ আসবে তাড়াতাড়ি।
কোভিড বিধি অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে এখনও অনেকদিন। একান্ত দরকার না হলে বাড়ির বাইরে বেরোবেন না। যদি সব নিয়ম তুচ্ছ করে বেড়াতে বা পিকনিক করতে বেরিয়ে পড়েন, তা হলে বিপদ কেউ আটকাতে পারবে না। টিকাকরণের হার ভারতের চেয়ে বহুগুণ ভালো হওয়া সত্ত্বেও ব্রিটেনে কিন্তু ফের সংক্রমণ মাথাচাড়া দিতে আরম্ভ করেছে। ভ্যাকসিনেশন হয়ে গিয়েছে বলে বহু আমেরিকান থ্যাঙ্কসগিভিং ডের ছুটিতে মুক্তকচ্ছ হয়ে বেরিয়ে পড়েছেন – এই অপরিণামদর্শিতার কারণেই একের পর এক ওয়েভ আছড়ে পড়ছে।
দ্বিতীয় ঢেউ মারাত্মক আকার নিয়েছিল ভাইরাসের ভারতোয় ভ্যারিয়ান্ট বা ডেল্টা স্ট্রেনের কারণে। যে মুহূর্ত থেকে কোনও একটি বিশেষ ওয়েভ কমতে আরম্ভ করে, সেই ক্ষণ থেকেই ভাইরাস অতি দ্রুত মিউটেশন ঘটায় – আরও শক্তি বাড়িয়ে ফিরে আসে। যত তাড়াতাড়ি ভ্যাকসিনেশনের কাজ শেষ হবে, তত নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে এই মিউটেশনকে। ভারতে কিন্তু খুব কম মানুষ টিকাকরণের আওতায় এসেছেন এখনও পর্যন্ত। তাই আরও জটিল মিউটেশনের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
নিতি আয়োগের স্বাস্থ্য বিষয়ক দফতরের প্রধান বিনোদ পল পরিষ্কার বলেছেন যে, এ দেশে টিকাকরণের যা গতি, তাতে সমস্ত দেশবাসী তার আওতায় আসার আগেই তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়বে। জুলাই মাস নাগাদ বিদেশ থেকে আমদানি করা ও দেশে তৈরি টিকার পরিমাণ মিলিয়ে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হতে পারে। তাই সমস্ত দেশবাসীকে নিজের পরিবারকে সুরক্ষিত রাখার দায় নিতে হবে।
যাঁরা আপনার বাড়িতে কাজে সাহায্যের জন্য আসেন, গাড়ি চালান, ছোটো ব্যবসা করেন বা বাজারে পসরা নিয়ে বসেন, তাঁদেরকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার। অনেক সময়েই গরিব মানুষদের এত সচেতনতা থাকে না, স্মার্টফোনের অভাবে তাঁরা ভ্যাকসিনের রেজিস্ট্রেশন করাতে পারেন না। এঁরা কিন্তু তৃতীয় ওয়েভের সুপারস্প্রেডার হয়ে উঠতে পারেন অজ্ঞতার কারণে। এঁদের দায়িত্ব নিন, টিকাকরণ করান এবং কোভিড বিধি মেনে চলতে বাধ্য করুন।
না, করোনাকে আমরা হারিয়ে দিতে পারিনি এখনও – এটাই সবচেয়ে জরুরি ও সত্যি কথা। আপাতত একটা যুদ্ধ বিরতি মিলেছে। সেই সময়টাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের নিরাপত্তা বাড়াতে হবে। বেড়াতে যাওয়ার সুযোগ ফের আসবে, পিকনিক বা পার্টি এ বছর না হলেও পরের বার করবেন। এখন নিশ্চিন্ত হওয়ার সময় নয় একেবারেই!