ভ্যাকসিনেশনের কাজ সারা দুনিয়া জুড়ে চলছে পুরোদমে। তার মধ্যেই আবার কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলছে ভাইরাসের নতুন নতুন স্ট্রেন – পৃথিবীর এক এক প্রান্তে তা এক এক রকম চেহারায় হাজির হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন কাজ করবে তো? এই সব নানা প্রশ্নে মানুষ জেরবার!
উহানে যে ভাইরাসটি দেখা দিয়েছিল আজ থেকে বছরখানেক আগে, তার সঙ্গে এখন যে সব ভ্যাকসিন বাজারে পাওয়া যায় সেগুলি চমৎকার লড়াই করছে। সমস্যা হচ্ছে, এখন উহান স্ট্রেন নিজেই কমজোরি হয়ে গিয়েছে, মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে কেন্ট, সাউথ আফ্রিকান আর ব্রাজিল ভ্যারিয়ান্ট।
সেপ্টেম্বর মাসে আতঙ্ক ছড়াতে আরম্ভ করে কেন্ট বা ব্রিটেন স্ট্রেনের করোনা ভাইরাস। নভেম্বর মাস থেকে তা দাপিয়ে বেড়াতে আরম্ভ করে গোটা বিশ্ব জুড়ে। দেখা গিয়েছে যে স্পাইক প্রোটিনের সাহায্যে ভাইরাস মানবদেহের কোষের সঙ্গে নিজেকে জুড়ে দেয়, সেই প্রোটিনেই এসেছে পরিবর্তন। ভ্যাকসিন নেওয়া থাকলেও এই ভ্যারিয়ান্ট ভুগিয়েছে, তবে খুব বাড়াবাড়ি পর্যায়ে যায়নি অসুখ, সেটাও ঠিক।
তবে এই ক’দিন আগেই ফের একটা মিউটেশন হয়েছে ভাইরাসে – এই মিউটেশনের সঙ্গে সাউথ আফ্রিকা ভ্যারিয়ান্টের মিউটেশনের মিল আছে। তাই বিজ্ঞানীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। কারণ একবার সংক্রমণের পর শরীরে যে ইমিউনিটি তৈরি হয়, তা অকেজো হয়ে যায় এই নতুন স্ট্রেনের আক্রমণে। এ ক্ষেত্রেও তেমনটা হয় কিনা সেটাই দেখার।
দক্ষিণ আফ্রিকা ভ্যারিয়ান্টের দাপট শুরু হয় অক্টোবর মাসে। ফেব্রুয়ারির মধ্যেই তার অন্তত গোটা দশেক মিউটেশন হয়ে গিয়েছে। আগেই বলা হয়েছে, একবার ইনফেকশন হলে যে স্বাভাবিক প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি হয় মানবশরীরে, তা এই ভাইরাসের প্রভাবে অকেজো হয়ে যাচ্ছে। ফলে তা ভ্যাকসিনের কার্যকারিতাও ক্রমশ কমাচ্ছে।
অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের ক্লিনিকাল ট্রায়াল চলছিল দক্ষিণ আফ্রিকায়, এই নয়া স্ট্রেনের আগমনের আগে পর্যন্ত তার কার্যকারিতা ছিল ৭৫%। তার পর সরকারি হিসেব অনুযায়ী ভ্যাকসিন কাজ করেছে মাত্র ১০% ক্ষেত্রে। নোভাভ্যাক্সের টীকার অবস্থাও প্রায় একইরকম। এ পর্যন্ত ২৩টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এই স্ট্রেন। কী হবে, নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।
ব্রাজিল ভ্যারিয়ান্ট তুলনায় নতুন, ডিসেম্বরে তার দেখা মিলেছে সবে। এর মধ্যেই কয়েকটি মিউটেশন হয়ে গিয়েছে, কারণ প্রতিরোধের বিরুদ্ধে টিকে থাকার জন্য ভাইরাসও নিত্যনতুন রাস্তা বের করছে। মানাউস শহরের অবস্থা সবচাইতে খারাপ – তীব্র অক্সিজেনের অভাব দেখা দিয়েছে সেখানে।
তা হলে কি ভ্যাকসিন নিয়ে কোনও লাভ নেই?
টীকাকরণকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার মতো অবস্থাও হয়নি, তার কারণ নির্মাতারা জানেন ভাইরাসের মিউটেশন হয় এবং তাঁরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। হ্যাঁ, একটি ভ্যাকসিনে হয়তো কাজ হবে না, কয়েকটি আপগ্রেডেড বুস্টার ডোজ নিতে হবে। সেই সঙ্গে আরও আধুনিক ভ্যাকসিনও বেরোবে। সুতরাং টীকায় আস্থা রাখা ছাড়া উপায় নেই।