কয়েকদিন আগে কলকাতা পুলিশের জালে ধরা পড়েছে রাজস্থানের দুই অপরাধী। এদের কাজ ছিল ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে বয়স্ক পুরুষ নাগরিকদের ফাঁদে ফেলে ‘সেক্সটর্শন’ করা অর্থাৎ মিথ্যে যৌন অভিযোগ করে টাকা হাতানো। কার্যত সারা দেশেই এই ধরনের অপরাধের সংখ্যা বেড়েছে। মূল টার্গেট পুরুষরা, তবে মহিলাদের খুব নিশ্চিন্ত থাকার কারণ নেই।
এই প্রতারণাটি হচ্ছে মূলত দু’টি ফরম্যাটে। প্রথমত হনি ট্র্যাপ করা হচ্ছে পুরুষদের। ফেসবুকে কোনও অচেনা মহিলার থেকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসছে। তার পর শুরু হচ্ছে মেসেঞ্জারে চ্যাটিং। কিছুদিনের মধ্যে প্রণয় গাঢ় হয়ে ফোন নম্বর আদান-প্রদানের কাজ সারা হয়ে যাচ্ছে। তার পরের ধাপ হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিয়ো কল।
নারীটি এই ভিডিয়ো কলেই ঘনিষ্ঠ হওয়ার বাহানায় পোশাক খুলবে, পুরুষটিকেও তা করার অনুরোধ জানানো হবে। একবার ফাঁদে পা দিলেই নিশ্চিত থাকুন, সব ব্যক্তিগত মুহূর্ত রেকর্ড করে নেবে প্রতারক। পরদিন থেকেই নানা বিচিত্র নম্বর থেকে ফোন করে আপনার কাছ থেকে টাকা চাওয়া শুরু হয়ে যাবে।
দ্বিতীয় প্রতারণার ছকটা আবার একটু অন্যরকম। রাতের দিকে অচেনা হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে আসছে ভিডিয়ো কল। ফোনটা ধরলেই দেখা যাচ্ছে পর্নোগ্রাফিক মেটিরিয়াল। আপনি যখন কয়েক সেকেন্ডের জন্য বুঝতে পারছেন না কী করা উচিত, তখনই তুলে রাখা হবে আপনার স্ক্রিনশট। তারপর সেটাই মর্ফ করে নানা নিষিদ্ধ কনটেন্টে ব্যবহার হবে বলে হুমকি দিয়ে আসতে থাকবে ফোন।
আপনি যদি ফোন কেটে দেন, নম্বর ব্লক করে দেন বা নম্বর ডিলিট করে দেন তাতেও কিন্তু লাভ হবে না। মেলে বা সোশাল মিডিয়ায় আপত্তিকর ক্লিপ পাঠানো হবে বার বার।
কীভাবে বাঁচবেন এই পরিস্থিতি থেকে?
প্রথমত, সোশাল মিডিয়ায় আপনি কার সঙ্গে কতটা ঘনিষ্ঠতা করবেন, তা নিয়ে একটু বেশি ভাবনাচিন্তা করা উচিত। ঘনিষ্ঠতা হলেই নগ্ন ছবি বা ভিডিয়ো শেয়ার করবেন না। তা নিয়ে পরে বিপদ হতে পারে। এই ধরনের মেটিরিয়াল আপনি যাঁকে পাঠাচ্ছেন, তাঁর অসাবধানতায় অন্য কারও হাতেও চলে যাওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ফোন বা কম্পিউটার সার্ভিসিং বা ফরম্যাট করানোর সময়েও ডেটা হস্তান্তরিত হতে পারে।
দুই, এমন পরিস্থিতিতে পড়লে অতি অবশ্যই পুলিশের দ্বারস্থ হোন, টাকা দিয়ে মিটিয়ে নেওয়ার ভুলটা করতে যাবেন না। কারণ এই সমস্যাটা মিটিয়ে নেওয়ার আশায় শুরু করা হয়নি। সমস্ত তথ্য হাতে পেলে পুলিশ আপনার সহায় হতে পারে – সম্মানহানির ভয়ে গুটিয়ে থাকলেই বেশি ক্ষতি হবে।
তিন, অচেনা নম্বর থেকে আসা ভিডিয়ো কল ধরবেন না, ব্যস। এই ধরনের যে কোনও কলই বিপজ্জনক হতে পারে।
চার, ফোনে জরুরি কোনও পাসওয়ার্ড সেভ করে রাখবেন না। প্রতারণার পাশাপাশি আপনার ফোন হ্যাক করাও হতে পারে।