প্রাক্তন তারকা ক্রিকেটার সুনীল গাভাস্কার সম্প্রতি তোপ দেগেছেন ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের বিরুদ্ধে – বলেছেন সেখানে দ্বিচারিতা চলে এবং সব খেলোয়াড়কে সমানভাবে দেখা হয় না। উদাহরণ হিসেবে বলেছেন বিদেশের মাটিতে টেস্ট সিরিজ চলাকালীন পিতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়া হয়েছে বিরাট কোহলিকে, কিন্তু দলে নতুন মুখ টি নটরাজন আইপিএল শেষ করেই অস্ট্রেলিয়া দৌড়েছেন, তাঁর বাড়িতেও সদ্যোজাত সন্তান আছে – তাঁকে ছুটি দেওয়া হল না কেন?
ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক বিরাট কোহলি ও অভিনেত্রী অনুষ্কা শর্মার প্রথম সন্তানের জন্ম হবে আসন্ন জানুয়ারিতে। ভারতীয় ক্রিকেট টিমের সে সময় অস্ট্রেলিয়ায় খেলতে যাওয়ার কথা ছিল অনেক আগে থেকেই, তাই সুসংবাদ জানতে পেরেই বিরাট বোর্ড কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে রেখেছিলেন যে অস্ট্রেলিয়া থেকে তিনি সন্তানের জন্মের আগে দেশে ফিরবেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে বিদেশ থেকে দেশে ফিরে বিরাটকে কোয়ারান্টাইনে থাকতে হবে ১৫ দিন, তার পর তিনি স্ত্রীর কাছে যেতে পারবেন – সে সব হিসেব করেই তিনি আগে-ভাগে বাড়ি ফিরে এসেছেন।
এই প্রসঙ্গে উঠছে হার্দিক পান্ড্য এবং এমএস ধোনির কথাও। হার্দিকও প্রথমবার বাবা হয়েছেন আইপিএল চলার সময়েই, তিনিও বাচ্চাকে দেখতে সব কাজ ফেলে ছুটে যাননি। মহেন্দ্র সিং ধোনির কন্যার জন্মের সময় তিনিও অস্ট্রেলিয়াতেই ছিলেন, তখন বিশ্বকাপ চলছে। ম্যাচ থেকে ফোকাস যাতে না সরে, তা নিশ্চিত করার জন্য ধোনি তখন সঙ্গে মোবাইলও রাখতেন না। তাঁর স্ত্রী সাক্ষী সুরেশ রায়নাকে মেসেজ করে সুসংবাদ জানিয়েছিলেন। ধোনিকে পরে ঘিরে ধরেন সাংবাদিকরা, জানতে চান বাবা হওয়ার পরেও সন্তানকে দেখতে না পারায় কষ্ট হচ্ছে না? ধোনি বলেছিলেন, “আমি দেশের কাজ করছি, তার কাছে বাকি সব তুচ্ছ।”
ফলে বুঝতেই পারছেন, বাজার জমজমাট। গাভাস্করের সঙ্গে এমনিতেই বিরাট-অনুষ্কার ঠোকাঠুকি লাগে, বিরাট শিবিরের ধারণা, মাস্টার ব্লাস্টার তাঁকে খামোকাই ছোটো করে আনন্দ পান। একবার বিরাটের ব্যাটিং পারফরম্যান্স খারাপ হতে দেখে তিনি কমেন্ট্রি-বক্সে বসে খোঁচা মেরে বলেছিলেন, “লকডাউনে অনুষ্কার বলে খেলত তো, তাই ব্যাটে-বলে হচ্ছে না ঠিকমতো।”সে কথার জবাবে আসরে নামেন খোদ অনুষ্কা, গাভাস্করকে মুখের উপর বলে দেন, স্বামীর খারাপ পারফরম্যান্সের সমালোচনায় তাঁর স্ত্রীকে টেনে আনাটা ভদ্রতা নয়। বর্ষীয়ান তারকা সাফাই দিয়ে বলেছিলন তিনি মজা করেছেন, কিন্তু তাতে চিঁড়ে ভেজেনি, তাঁর রুচিবোধ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
এবার বিরাট শিবির তো বটেই, সাধারণ মানুষও গাভাস্করের সমালোচনায় মুখর। অনেকেই বলছেন, কে কী করেছেন, তার নিক্তিতে বিরাটের সিদ্ধান্তকে মাপা হবে কেন? গাভাস্করের মত যদি ব্যক্তিগত হয়, তা হলে বিরাটের সিদ্ধান্তও তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত। তাঁর যদি মনে হয় যে তিনি সন্তান জন্মের সময়ে স্ত্রীর পাশে থাকতে চান, তা হলে সেই সিদ্ধান্তকে সম্মান জানানো উচিত।
যাঁরা মনে করেন সন্তান পালনের দায় একা মেয়েদের, তাঁদের মানসিকতা অত্যন্ত গোঁড়া। বিরাট-অনুষ্কা দু’জনেই নিজের নিজের কাজের ক্ষেত্রে খুব সফল। সন্তানের দায়ভার সামলানোর জন্য তাঁরা যদি নিজেদের পেশাগত পরিচয়টাকে পিছনে সরিয়ে রাখতে চান, তা হলে চোখ কপালে তোলার কী আছে? আধুনিক দাম্পত্যে তো তেমনটাই হওয়ার কথা!
আজকাল বহু পুরুষ সন্তান পালনের দায়িত্ব একেবারে প্রথমদিন থেকেই ভাগ করে নিচ্ছেন স্ত্রীর সঙ্গে। পিতৃত্বকালীন ছুটি দিয়ে কার্পণ্য করে না বহু কর্পোরেট সংস্থাও। বিরাট কোহলির ছুটিটাকেও সেভাবেই দেখা উচিত নয় কী?
ফোটো: ইনস্টাগ্রাম