রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়াল তাঁর সামাজিক মাধ্যমের পাতায় তুলে ধরেছেন ভারতীয় রেলের নতুন নিবেদন ভিস্টাডোম ট্যুরিস্ট কোচের ছবি। বিদেশি সিনেমায় আমরা এতদিন যেমন দেখেছি, ঠিক তেমন বা তার চেয়েও ভালো দেখতে এই কোচগুলি তৈরি হয়েছে দেশীয় প্রযুক্তি মেনে, এখানকার ওয়ার্কশপেই। ট্রেনগুলির গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮০ কিলোমিটার, তার ট্রায়াল রানও খুব সফলভাবে সুসম্পন্ন হয়েছে।
এমনিতেই ভারতীয়েরা বেড়াতে ভালোবাসেন, তার উপর এই ধরনের কোচ থেকে বাইরের দৃশ্য দেখাও যাবে সুন্দরবভাবে। বিরাট বড়ো বড়ো কাচের জানলা ছাড়াও মাথার উপর থাকবে ট্রান্সপারেন্ট ছাদ। আরামদায়ক, গদিওয়ালা রিভলভিং চেয়ারে বসার ব্যবস্থা হচ্ছে, থাকছে জিপিএস বেসড পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেম, গান শোনার ডিজিটাল ডিসপ্লে স্ক্রিন – রেলমন্ত্রকের আশা, এর ফলে আয় বাড়বে পর্যটন বিভাগের।
আপাতত যা পরিস্থিতি, তাতে কিছুদিনের মধ্যেই এই পরিষেবা চালু হয়ে যাওয়ার কথা। প্রথমদিকে হাতে গোনা কয়েকটি রুটে এই কোচের সুবিধে মিলবে। তার মধ্যে থাকছে দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে, নীলগিরি মাউন্টেন রেলওয়ে লাইন, কালকা-সিমলা রেলওয়ে, কাংড়া ভ্যালি রেলওয়ে, মাথেরান হিল রেলওয়ে, মুম্বইয়ের দাদর থেকে আরাকু ভ্যালির মাদগোয়ানের মধ্যেকার রেলপথ।
প্রতিটি রুটই সিনিক বিউটির জন্য বিখ্যাত, কিন্তু সেই সঙ্গে একথাও ঠিক যে সাধারণ ট্রেনের কামরা থেকে যাত্রাপথের সৌন্দর্য পুরোপুরি উপভোগ করা সম্ভব নয়। তাই চারদিক কাচ দিয়ে মোড়া কামরা থেকে প্রকৃতির মন ভরানো রূপ তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করা যাবে নিশ্চিতভাবেই!
তবে সেই সঙ্গে আরও একটি বিষয়ের অবতারণা করা একান্ত জরুরি। ট্রেনের দামী সিট দেখলেই ব্লেড চালিয়ে চিরে ফাঁক করে দেওয়া, বাথরুম অতি নোংরা করে বেরিয়ে আসা, টয়লেটে রাখা সমস্ত জিনিসপত্র হাপিস করে দেওয়া, জলের বোতল রাখার জায়গায় পানের পিক ফেলা বা গুটখার প্যাকেট গুঁজে রাখা, খাবার খেয়ে কামরার সর্বত্র ছড়ানোর মতো ভুলগুলো আমরা যাত্রীরা আবার এই কোচেও করব না তো?
ভারতীয় রেলের পরিষেবার মান নিয়ে অনেক বিরূপ মন্তব্য আমরা সবাই করি, তার অনেকটা সত্যিও। ট্রেনে পরিবেশিত খাবারের মান খারাপ, ট্রেন প্রায়শই লেট করে, একা মহিলাদের সফর নিরাপদ নয় – এগুলো সব ঠিক। তার বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা যেমন জরুরি, তেমনভাবেই আবার জাতীয় সম্পত্তি সুরক্ষিত রাখার খানিকটা দায় যে আমাদের উপরেই বর্তায়, সেটাও অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই কিন্তু!
ফোটো: টুইটার