আজকাল স্কুলপড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের দিনের একটা বড়ো সময়ই কাটে অনলাইনে। স্কুলের ক্লাস, টিউশন, এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি – সবই চলছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে।
আর তার ফাঁকফোকর গলেই আসছে নয়া সমস্যা। সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, অনলাইন ক্লাসের ফাঁকে পর্নোগ্রাফিক সাইট বা অ্যাডাল্ট গেমে আসক্ত হয়ে পড়ছে কিশোর-কিশোরীরা।
সমস্যা এতটাই গুরুতর আকার ধারণ করেছে যে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড়ে সরকারকে বিজ্ঞাপন দিতে হয়েছে, ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময়েও প্রলোভনের ফাঁদ থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বারবার। স্কুলের তরফে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে বলা হচ্ছে অভিভাবকদেরও।
১. বাচ্চার ক্লাস কতক্ষণ চলছে, সে বিষয়ে একটা ধারণা থাকা দরকার বাড়ির লোকের। সব সময়ে হয়তো মা-বাবা থাকেন না, কিন্তু সহায়ক বা বয়স্ক কেউ থাকেন নিশ্চয়ই? তাঁদের সুবিধের জন্য সন্তানের পড়ার ঘরের দরজায় বড়ো বড়ো অক্ষরে লেখা একটা রুটিন টাঙিয়ে রাখা দরকার।
২. এই ক্লাসের বাইরেও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডা, গল্পগুজব ইত্যাদি বাবদ খানিকটা সময় কাটাবে সেই ছেলে বা মেয়েটি। তার পর কিন্তু তাকে স্বাভাবিক পড়াশুনো করতে হবে – বই, খাতা, পেন, পেনসিল নিয়ে রোজ সে পড়তে বসে তো? হোমওয়ার্ক করে তো? সেদিকে লক্ষ রাখুন।
৩. একেবারে ছোট শিশুর ক্ষেত্রে ক্লাস চলাকালীন সঙ্গে কারও থাকা নিয়ম। যাদের বছর ৮-১০ বয়স, তাদের ফোন বা ট্যাবে অবশ্যই চাইল্ড লক লাগিয়ে রাখুন। মনে রাখবেন, আজকালকার সব বাচ্চাই টেকনোলজি সম্পর্কে বাবা-মায়ের চেয়ে বেশি ওয়াকিবহাল। তারা যেন বুদ্ধিতে আপনাকে মাত না দিতে পারে, সেটা দেখার দায় আপনারই।
৪. লুকিয়ে চুরিয়ে মোবাইল বা ট্যাব ব্যবহারের প্রবণতা তৈরি হলে সতর্ক হতেই হবে। তা ছাড়া পর্ন বা অ্যাডাল্ট কনটেন্টে আসক্ত হলে সন্তানের ব্যবহারেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসবেই। সেই সঙ্গে ব্যাহত হবে মনঃসংযোগ, স্কুল থেকে নালিশ আসবে, খারাপ হবে রেজাল্ট। এই লক্ষণগুলো দেখতে পেলেই সতর্ক হতে হবে।
৫. সন্তানকে অহেতুক বকাঝকা করবেন না, কঠিন শাস্তি দেওয়ারও কোনও মানে হয় না! যে কোনও অ্যাডিকশনের খারাপ দিকটা আপনাকে বুঝিয়ে বলতে হবে। দরকারে মনোবিদের সাহায্য নিতে হবে। মনে রাখবেন, সারা দুনিয়া ‘নিউ নরমাল’ অনুযায়ী নিয়মকানুন বদলে নিচ্ছে, আপনাকেও অভিভাবক হিসেবে কিছু নিয়ম পালটাতে হবে।
৬. যৌন চেতনা জাগাটা খুব স্বাভাবিক, তবে অল্প বয়সে পর্নোগ্রাফি বা অ্যাডাল্ট কনটেন্টে আসক্তি তৈরি হলে আরও নানা সমস্যা হতে পারে। সেটা সন্তানকে বুঝিয়ে বলা দরকার। আর সে কাজ আপনার চেয়ে ভালো কেউ পারবে না। সতর্ক দৃষ্টি রাখুন, কোনও সমস্যা আদৌ হচ্ছে কিনা আগে সেটা বুঝে দেখা দরকার। তার পর যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বেশি সময় লাগবে না।