ভারতবর্ষে শিশুদের যৌন নিগ্রহ থেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য বিশেষ একটি আইন আছে – প্রোটেকশন অফ চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস অ্যাক্ট বা পকসো। সেই পকসো আদালতে ওঠা দু’টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে সম্প্রতি। দু’টিতেই অপরাধীর যে শাস্তি হয়েছে, তা নিয়ে নানা মহলে আলোচনা চলছে।
প্রথমটিতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন এক দম্পতি, স্বামীর বয়স ৮৭, স্ত্রীর ৮১। বিচারক ১০ বছরের কঠিন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন, সঙ্গে নির্যাতিতা শিশুকে ক্ষতিপূরণ বাবদ এক মাসের মধ্যে এক লক্ষ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অনাদায়ে সাজা আরও বাড়বে। জানতে চান অপরাধ কী ছিল এই স্বামী-স্ত্রীর?
পাশের বাড়ির পুচকে একটা চার বছরের মেয়েকে বারান্দার দোলনায় চড়ার লোভ দেখিয়ে বাড়ি নিয়ে আসে বুড়ো। খানিকক্ষণ দোল খেয়ে ফিরে যাবার জন্য দোলনা থেকে নামতেই দাদুটি এসে ধরে বাচ্চা মেয়েটাকে, গালে দুই চড় মেরে তার জামা খুলতে আরম্ভ করে। তখন দিদা এসে তার হাত চেপে ধরেছিল। এরপর দাদু জোর করে সঙ্গম করে। তার পর দিদা – হ্যাঁ, বুড়িও শিশুটির সঙ্গে যৌনতায় লিপ্ত হয়। শেষে আহত, ক্ষত-বিক্ষত বাচ্চাটিকে উদ্ধার করা হয় বাড়ির বাইরে থেকে।
দ্বিতীয় ঘটনায় যৌন নিগ্রহ থেকে বাঁচতে ১০ বছরের দুই যমজ মেয়েকে ক্যারাটে ক্লাসে ভর্তি করেছিলেন মুম্বইয়ের এক দম্পতি। ক্লাসের শিক্ষক নিয়মিত শারীরিক নিগ্রহ করত দুই বোনকে – শিশুগুলি ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকত, দীর্ঘদিন কাউকে কিছু জানানোর সাহসও পায়নি। ৪৩ বছরের এই শিক্ষকের ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়েছে। বিচারকের ধারণা, এই বাচ্চা দু’টি ভবিষ্যতে না পারবে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে, না কোনও ক্লাসে যেতে!
মনে রাখবেন, এই দু’টি ঘটনাই আদালত পর্যন্ত পৌঁছেছে, এমন কতশত রোজ ঘটে, আমরা জানতেই পারি না। কেবল মেয়েরাই নির্যাতিত হয়, এমনটা ভাবাও ভুল। ছেলেদের উপরেও যৌন আক্রমণ হতে পারে। তাই ছোটো থেকে বাচ্চাদের কয়েকটি বিষয় ভালোভাবে শেখানো উচিত।
. মানুষের কাছে স্পর্শ খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। স্পর্শের মাধ্যমে রাগ, দুঃখ, ভালোবাসা যেমন বোঝানো যায়, তেমনই আবার কষ্টও দেওয়া যায়। বাচ্চাকে বোঝান, কারও স্পর্শ যদি তার শরীরকে কষ্ট দেয়, বা অস্বস্তি হয় — তা হলে যেন সে আপনাকে জানায়।
. বেশিরভাগ নিগ্রহই ঘটে চেনা পরিচিত আত্মীয়, বন্ধুদের হাতে। তাই কাউকে বিশ্বাস করবেন না। যাঁরা বাড়িতে কাজের লোকের হাতে বাচ্চাকে ছেড়ে রেখে বেরোচ্ছেন, তাঁরাও পারলে সিসি টিভি ইনস্টল করে রাখুন।
. বাইরে থেকে দেখে নিগ্রহকারীকে চেনা যায় না – সে যে কেউ হতে পারে। কারও ভরসায় সন্তানকে ছাড়বেন না।
. বাচ্চার ব্যবহারে কোনও পরিবর্তন আসছে কিনা দেখুন। সে কথা বলা বন্ধ করে দিলে, একা একা কান্নাকাটি করলে, ভয় পেলে তার সঙ্গে কথা বলুন – দরকারে মনোদিদের সাহায্য নিন।
. সন্তানকে তার শরীর চিনতে সাহায্য করুন। কোন কোন অঙ্গ তার একান্ত ব্যক্তিগত সেটা একটা চার-পাঁচ বছরের বাচ্চারও জানা উচিত।