মালালা ইউসুফজাইয়ের উপর কট্টরপন্থী ইসলামে বিশ্বাসীদের আক্রমণ নতুন নয়। সেই কোন কিশোরীবেলায় মেয়েদের লেখাপড়ার অধিকারের জন্য লড়াই করতে গিয়ে প্রাণঘাতী হামলার মুখে পড়েছিলেন তিনি। নতুন এক মত প্রকাশের কারণে ফের তিনি সমালোচকের নিশানায়।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক মালালা এখন ব্রিটেনেই থাকেন, সম্প্রতি বিখ্যাত ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল পত্রিকা ‘ভোগ’-এর ব্রিটিশ সংস্করণ তাঁকে প্রচ্ছদকন্যার সম্মান দিয়েছে, সেখানেই ছাপা হয়েছে তাঁর একান্ত সাক্ষাৎকার। গন্ডগোলের সূত্রপাত সেখান থেকেই।
নানা বিষয়ে মন খুলে কথা বলেছেন মালালা, তার মধ্যে একটি প্রশ্ন ছিল বিয়ে নিয়ে। আজকের যুগের বহু সদ্যস্নাতক তরুণ-তরুণীর কাছেই বিয়ের মতো একটি প্রতিষ্ঠান গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছে – কেউই নিজের নিশ্চিন্ত ‘স্পেস’ ছেড়ে অন্যের সঙ্গে মানিয়ে-গুছিয়ে সারা জীবন থাকার পক্ষপাতী নয়। সেই একই কথার প্রতিধ্বনি শোনা গিয়েছে মালালার গলাতেও – তাঁর বক্তব্য, একসঙ্গে থাকতে গেলে ‘পার্টনারশিপ’ হলেই তো হয়, বিয়ের কী দরকার!
বলেছেন, “সম্পর্কের কথা যখনই ভাবি, বা সোশাল মিডিয়ায় যখন দেখি লোকে নিজেদের সম্পর্কের কথা বলছে, তখন আমার একটু চিন্তাই হয়… সত্যিই কি কারও উপরে বিশ্বাস করা যায়? কীভাবে আপনি নিশ্চিত হতে পারেন কারও ব্যাপারে? আমি সত্যিই এখনও বুঝতে পারি না বিয়ে করার দরকারটাই বা কী? ধরুন আপনি কারও সঙ্গে গোটা জীবনটা কাটাতে চান – তার জন্য বিয়ের কাগজে কেন সই করতে হবে? একসঙ্গে পার্টনারের মতো থাকাটাও তো দাম্পত্য হতে পারে, তাই না?”
ব্যস, আর যায় কোথায় – পাকিস্তানের রক্ষণশীল সমাজ ক্ষোভে ফেটে পড়েছে একেবারে! নোবেল প্রাইজ পেয়েই মালালার মাথাটা গিয়েছে অল্প বয়সে, জিয়াউদ্দিন ইউসুফজাই মেয়েকে হাতের মুঠোয় রাখতে পারেননি – এ সব কমেন্টের বন্যায় তোলপাড় সে দেশের সোশাল মিডিয়া।
আইনবিদরা গেল গেল রব তুলেছেন – এভাবে দেশের ‘ইউথ আইকন’ বিয়েকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিলে তো সমাজ গোল্লায় যাবে! শিক্ষাবিদ আর সমাজের মাথারা রে রে করে উঠেছেন – এ তো বিদেশে থেকে পুরো পশ্চিমি চিন্তাধারার কথা বলছে! এর মধ্যে দেশের সংস্কৃতির ছিটেফোঁটার অবশিষ্ট নেই বলে কপাল চাপড়াচ্ছেন মৌলবীরা। বেশিরভাগেরই ধারণা, বৈধ স্বামীর সঙ্গে সহবাস করে সন্তান জন্ম দেওয়ার যে রীতি, তার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন মালালা।
পেশোয়ারের জনপ্রিয় মৌলবী মুফতি শাহাবুদ্দিন পোপালজাই টুইটারে সরাসরি আক্রমণ করেছেন মালালার বাবাকে। বলেছেন, মেয়ের এই বেয়াদবির জন্য জিয়াউদ্দিনকেই জবাবদিহি করতে হবে। মালালার বাবা যা বলেছেন তার অর্থ, তাঁর মেয়ে বিয়ে বা নারী-পুরুষের বৈধ সম্পর্কের বিরোধিতা করে কিছু বলেননি, মিডিয়া তাঁর বক্তব্যের একটি অংশ ভুলভাবে তুলে ধরে বিষয়টিকে নিয়ে অহেতুক বিতর্ক তৈরি করছে।
আরও এক পা এগিয়ে মালালার আদি বাড়ি যেখানে, সেই খাইবার পাখতুনওয়া প্রদেশের বিধানসভায় দাবি উঠেছে, ইমরান খান সরকারকে মালালার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিশন বসাতে হবে। দেখতে হবে জিয়াউদ্দিন যা বলছেন তা সত্যি কিনা। যদি তাঁর দাবি মিথ্যে হয়, তাহলে তাঁদের দেশে এনে শাস্তি দিতে হবে।
ইমরান খানের মন্ত্রীসভা ও আইনবিদরা অবশ্য ব্যাপারটা নিয়ে এত জলঘোলা করার পক্ষপাতী নন একেবারেই। তাঁদের বক্তব্য, মালালা যা বলেছেন সেটা তাঁর ব্যক্তিগত মত, তা নিয়ে অহেতুক বিতর্ক তৈরি করার মানে হয় না। মালালার তরফেও তাঁর বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে বলে কোনও অভিযোগ শোনা যায়নি এখনও পর্যন্ত।