সবে নিয়ন্ত্রণে আসতে আরম্ভ করেছে ঘাতক করোনা ভাইরাসের বাড়বাড়ন্ত, তারই মধ্যে কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ ফেলছে বার্ড ফ্লু বা এভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা। দু’দিন আগেই কেরল এই অসুখটিকে ‘স্টেট ডিজাস্টার’ বলে ঘোষণা করেছে। মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, হিমাচলপ্রদেশ, পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় জারি হয়েছে চূড়ান্ত সতর্কতা। কেরলে গৃহপালিত হাঁস ও মুরগির নিধন শুরু হয়ে গিয়েছে যাতে H5N8 স্ট্রেনের ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
বার্ড ফ্লু কী? তা নিয়ে এত চিন্তারই বা কী আছে?
বার্ড ফ্লু নামক অসুখটি ভাইরাল ইনফেকশন, তা এক পাখি থেকে অন্য পাখিতে ছড়ায় সহজে। কিন্তু কিছু কিছু ভাইরাসের স্ট্রেন এমনভাবেই মিউটেট করেছে যে তা অন্য পশু এমনকী মানুষকেও ঘায়েল করে ফেলে। প্রাণীদের থেকে যে সব ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করে, তা যে কতটা ঘাতক হতে পারে, তা আমরা এখন জানি। তবে H5N1 স্ট্রেন থেকে ১৯৯৭ সালেই ছোটোখাটো এক বিপর্যয় হয়েছিল, আক্রান্ত হয়েছিলেন বহু মানুষ, মারা গিয়েছিলেন ৬০ শতাংশ রোগী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বহুদিন ধরে বলে আসছে যে বার্ড ফ্লু যে কোনওদিন মহামারির আকার নিতে পারে।
H5N1 ছাড়াও গত কয়েক বছরে H7N9, H5N6, এবং H5N8 নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে – বিশেষজ্ঞেরা মনে করেন যে এর মধ্যে যে কোনওটি থেকে বিপর্যয় হতে পারে। বার্ড ফ্লু খুব দ্রুত ছড়ায়। সেই সঙ্গে মনে রাখতে হবে যে এখন শীতকাল, গোটা দেশে আছে অসংখ্য পরিযায়ী পাখি – তাদের ডানায় ভর করে কখন যে তা আরয় ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়বে, তা বোঝা মুশকিল। হিমাচলে ইতিমধ্যে বহু পরিযায়ী পাখির মৃত্যু হয়েছে। এই রোগটি সাধারণত বুনো পাখি থেকেই ছড়ায়।
মানুষকে কীভাবে ঘায়েল করে বার্ড ফ্লু?
আক্রান্ত কোনও জীবিত বা মৃত পাখির মল বা শারীরিক ক্ষরণ থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে এভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা। শরীরে রোগের লক্ষণ ফুটে ওঠে খুব তাড়াতাড়ি – আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে পাঁচদিনের মধ্যেই জ্বর আসে, সঙ্গে থাকে সর্দি-কাশি-গলাব্যথার মতো উপসর্গ। বুকে কফ জমে অনেকে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন। কারও কারও পেট খারাপ বা চোখের ইনফেকশনও হয়। বাজার থেকে কেনা বার্ড ফ্লু আক্রান্ত হাঁস বা মুরগির মাংস ধোওয়া বা রান্না করার সময় সতর্ক না থাকলেও এই রোগ হতে পারে।
এই অবস্থায় কী করা উচিত?
. আতঙ্কিত হবেন না, তবে আপনার এলাকায় বার্ড ফ্লু ছড়াতে আরম্ভ করার পর যদি আপনার শরীরে কোনও লক্ষণ ফুটে ওঠে, তা হলে ডাক্তার দেখান। ডাক্তার দেখানোর আগে ফোনে কথা বলে নেবেন, কারণ রোগটি ছোঁয়াচে।
. ভালো করে রান্না করা পাখির মাংস বা ডিম থেকে সাধারণত কোনও সমস্যা হয় না। তবে এখন কাঁচা বা আধ সেদ্ধ ডিম না খাওয়াই ভালো। কাঁচা মাংস ছোঁওয়ার পরে হাত গরম সাবান জলে ধুয়ে নিন অতি অবশ্যই।
. আপনার এলাকাইয় রোগ ছড়ালে ভিড় বাজার এড়িয়ে চলুন, যেতে হলে অবশ্যই গ্লাভস আর মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।