গোটা দক্ষিণ আমেরিকায় লাফিয়ে লাফিয়ে দৈনিক কোভিড সংক্রমণের হার যখন বাড়ছে, তখন সংবাদসংস্থা রয়টার্সের গত কালকের রিপোর্ট বলছে যে কিউবায় এখন সংক্রমিতের সংখ্যা হাজার দেড়েক। এটাও জানিয়ে রাখা যাক যে, এই সংখ্যাটা মাসখানেক আগে যা ছিল, তার চেয়ে একটু বেড়েছে আশপাশের দেশগুলির সঙ্গে তাল মিলিয়েই – কিন্তু তার পরেও জনসংখ্যার নিরিখে তা নামমাত্র।
কোন ম্যাজিকে তা সম্ভব হল? তা জানতে হলে কিউবা সম্পর্কে আরও কয়েকটি বিষয় জানা দরকার। লাতিন আমেরিকার এই ছোট্ট দেশটা গরিব, অর্থাভাব, খাদ্যাভাবে জর্জরিত। কিন্তু তাদের স্বাস্থ্য পরিষেবার মান খুব ভালো, সেই সঙ্গে গোটা দেশে সরকার পরিচালিত বায়োটেক সেক্টরের মান অসামান্য।
সেখানে রিসার্চের ফান্ড জোগাড় করা কঠিন। (ভ্যাকসিন প্রকল্পের ডিরেক্টরের মাইনে কত জানেন? ভারতীয় মুদ্রায় ২১,০০০ টাকার মতো!) কিন্তু তা সত্ত্বেও কিউবা দেশের শিশুদের দেওয়ার মতো সব ভ্যাকসিন নিজেরা তৈরি করে, অন্যান্য দেশকে তা পাঠায়ও। কোভিড দাঁত-নখ বের করতে আরম্ভ করা মাত্রই সেখানে প্রতিষেধক নিয়ে গবেষণা শুরু হয়ে গিয়েছিল, এ বছরেই সেখানে পাঁচটি ভ্যাকসিন মানুষের উপর প্রয়োগের জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়।
কিউবার প্রতিষেধকগুলি নিয়ে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানমঞ্চে হইচই বা আলোচনা হয়নি আগে, তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘কোভ্যাক্স’ প্রজেক্টে নামও লেখায়নি। কোভ্যাক্সের মাধ্যমে সব গরিব দেশগুলিতে ভ্যাকসিন পৌঁছনোর দায়িত্ব নিয়েছিল WHO, গোড়া থেকেই সে উদ্যোগ মুখ থুবড়ে পড়েছে। সমস্ত শক্তিশালী দেশই আপাতত নিজেদের ভাগের ভ্যাকসিন গুছোতে ব্যস্ত – গরিব দেশে তা পৌঁছতে এখনও বছর দুয়েক লাগবেই।
এই সত্যিটা একেবারে গোড়াতেই মেনে নিয়ে নিজের মতো করে এগিয়েছে কিউবা, তাদের পাঁচটি ভ্যাকসিনের বেশিরভাগেরই এখন তৃতীয় দফার ট্রায়াল চলছে – কিন্তু তার মধ্যেই তা জনসাধারণের উপর প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেখানকার সরকার। সমালোচনা হয়েছিল, কিন্তু রোগীর সংখ্যা দেখে বোঝা যাচ্ছে যে প্রতিটি ভ্যাকসিনই কাজ করেছে।
আগস্টের মধ্যে কিউবার ৭০ শতাংশ মানুষের ভ্যাকসিনেশনের কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। ডিসেম্বর শেষ হওয়ার আগেই সমস্ত নাগরিকের টিকাকরণ সম্পন্ন হবে। সেপ্টেম্বরের আগেই ট্রায়ালের পর্ব শেষ করে নথিপত্রও জমা দিতে পারবেন নির্মাতারা, তার পরেই কিউবার টিকা অন্য দেশে পাঠানো শুরু হবে।
পাশাপাশি জনগণকে কোনওরকম জমায়েতের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না এখনও, কোথাও রোগীর সংখ্যা বাড়লেই প্রয়োগ করা হচ্ছে কড়া বিধিনিষেধ। গত বছর থেকে কঠোরভাবে মেনে চলা হচ্ছে কোভিডবিধি – কিউবায় কোভিডের কারণে মৃতের সংখ্যাও নগণ্য।
সরকার আর জনসাধারণ একসঙ্গে চেষ্টা করলে সব কিছুই যে সম্ভব হতে পারে, তা প্রমাণ করে দেখাল কিউবা!