যে কোনও সংক্রমণ কীভাবে বাড়বে বা কমবে, তা আগে থেকে বোঝা যায়। অঙ্কের হিসেবে গণনা করে কাছাকাছি একটা সংখ্যায় পৌঁছনো যায় – তবে মানুষের ব্যবহার ও অভ্যেস যেহেতু আগে থেকে পুরোটা বোঝা সম্ভব নয়, তাই কোনও আগাম পরিসংখ্যানই একশো শতাংশ নির্ভুল হয় না।
যে কোনও অতিমারি বা মহামারিকে বিশেষজ্ঞরা গাণিতিক ফর্মুলায় ফেলে তার ভয়াবহতা আঁচ করতে পারেন। বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স-এর পূর্বানুমান মডেল বলছে, সরকারের তরফে ঘোষিত অ্যাকটিভ রোগীর সংখ্যার প্রেক্ষিতে ধরে নেওয়া যাক যে এ দেশের ‘সেরো প্রেভেলেন্স ফ্যাক্টর’-এর মান 10x, যার অর্থ হচ্ছে একটি কেস পজিটিভ হলে ন’টি ধরাই পড়ছে না। এই হিসেবে চললে সংক্রমণ শীর্ষে ওঠার কথা এপ্রিলের তৃতীয় বা চতুর্থ সপ্তাহে।
তার পর সংখ্যাটা ফের নামবে, মোটামুটি জুন নাগাদ এই সেকেন্ড ওয়েভ শান্ত হওয়ার কথা। এই হিসেবটা করা হয়েছে গত বছর মার্চ-অক্টোবরের পরিসংখ্যান অনুসরণ করে। সেই সঙ্গে ধরে নেওয়া হয়েছে যে, মোটামুটি ৩ মিলিয়ন রোগীকে রোজ ভ্যাকসিন দেওয়ার বন্দোবস্ত থাকবে।
সরকারের তরফে যদি কোভিড নিয়ে চূড়ান্ত শিথিলতা থাকে এবং সাধারণ মানুষ যদি কোভিড সংক্রান্ত সমস্ত বিধিনিষেধ শিকেয় তুলে মুক্তকচ্ছ জীবন যাপন আরম্ভ করেন, তা হলে পরিস্থিতি সঙ্কটজনক হতে পারে এবং সেই ‘ওয়ার্স্ট কেস সিনারিও’ ধরেও একাধিক পরিসংখ্যান তৈরি হয়েছে। সেখানে সেরো প্রেভেলেন্স ফ্যাক্টর 2x, অর্থাৎ প্রতিটি ‘রিপোর্টেড’ কেস পিছু একটি ‘আনরিপোর্টেড’ কেস থাকবে এবং সেই হিসেবে সংক্রমণ শীর্ষে পৌঁছনোর কথা এপ্রিলের শেষে। মে মাসের আগে এই সংখ্যা কমবে না। জুনের শেষে গিয়ে রেখচিত্র নিচে নামার কথা।
শ্ত্রুর মুখে ছাই দিয়ে আমরা বহাল তবিয়তে ওয়ার্স্ট কেস সিনারিওর দিকেই এগোচ্ছি। নির্বাচন সমস্ত সামাজিক দূরত্বের প্র্যাকটিস ঝাঁটার বাড়ি মেরে তাড়িয়েছে, চৈত্র সেলই হোক বা বিয়েবাড়ি – সর্বত্র দলে দলে যোগ দিচ্ছে মাস্কহীন বাঙালি। কুম্ভ মেলার ধুম দেখে দেখে তাক লেগে গিয়েছে সারা দুনিয়ার। এই গতিতে এগোলে কী হবে, তা আন্দাজ করার ক্ষমতা কোনও গণিতজ্ঞের নেই!
কেউ কেউ বলছেন, যত তাড়াতাড়ি কেসের সংখ্যা বাড়ছে, তত দ্রুতই তা কমতেও আরম্ভ করবে আন্দাজ জুন মাস থেকে। কিন্তু মানুষ যদি মাস্ক পরা আর ঘর থেকে অপ্রয়োজনে না বেরনোর অভ্যেসে দ্রুত না ফিরতে পারে, তা হলে জুন পর্যন্ত চিকিৎসা পরিষেবার হাল বেহাল হয়ে যাবে। সেই পরিস্থিতি আসার আগেই সতর্ক হওয়া উচিত নয় কি?