আপনি কি মাস্ক পরে আর ঘরে বন্দি থেকে থেকে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছেন? বার বার মনে হচ্ছে এভাবে আর পারা যাচ্ছে না? সবে একটা বছর হয়েছে, এত তাড়াতাড়ি কিন্তু এই অতিমারি আমাদের মুক্তি দেবে না। একশো বছর আগে স্প্যানিশ ফ্লুয়ের সময়ে যে সব অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে মানবসভ্যতা, তা দেখে তো অন্তত তেমনটাই মনে হয়!
স্প্যানিশ ফ্লুয়ের মূলে ছিল H1N1 ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস এবং সেটিও ছিল নোভেল, বা একেবারে নতুন জীবাণু। ফলে কোভিডের মতোই তার সঙ্গে লড়ার উপযোগী ইমিউনিটি বা প্রতিরোধক্ষমতা ছিল না মানুষের – স্প্যানিশ ফ্লু ছড়িয়েও পড়েছিল খুব তাড়াতাড়ি, কোভিডের মতোই রেসপিরেটরি ড্রপলেটের মাধ্যমে।
আমেরিকাতে শুরু হয়েছিল এই সংক্রমণ, তা প্রবলভাবে অ্যাকটিভ ছিল অন্তত দু’বছর এবং সংক্রমণের তিনটি ওয়েভ দেখা গিয়েছিল। কিন্তু তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলছে, দেশবাসী যাতে আরও ঘাবড়ে না যান, তাই আমেরিকা বা ইউরোপ ভয়াবহভাবে আক্রান্ত হলেও খবরের কাগজে তা নিয়ে লেখালিখি তেমন হয়নি। স্পেন যুদ্ধে যোগ দেয়নি, সেখানকার মিডিয়া এই বিষয়ে প্রচারের আলো ফেলেছিল, তাই অসুখটির নাম দাঁড়ায় স্প্যানিশ ফ্লু।
সে সময়েও গজ কাপড়ে তৈরি মাস্ক পরার পরামর্শ দেওয়া হত সবাইকে। কিন্তু যেহেতু মিলিটারি ব্যারাকে রোগের সূত্রপাত হয়েছিল এবং সেনারা এক জায়গা থেকে অন্যত্র যাওয়ার সময় তা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। মিলিটারি ব্যারাকে কতই বা দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব? তার উপর প্রথম ঢেউয়ের দাপট কমে যাওয়ার পর মানুষ ব্যাপারটাকে খুব হালকাভাবে নেয়, ফলে দ্বিতীয় ঢেউয়ের মারণক্ষমতা ছিল বেশি।
মোট পাঁচ কোটি মানুষ মারা গিয়েছিল এই কালান্তক জ্বরের কারণে। তবে তখন চিকিৎসাশাস্ত্র এত উন্নত হয়নি, অ্যান্টিবায়োটিকের আবিষ্কার হয়নি, তথ্য আদানপ্রদানের যে সুবিধে আজকের পৃথিবীতে আছে, তার বিন্দুমাত্র ছিল না, টিকার ব্যবস্থা করার আগেই ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়ে গিয়েছিল।
কোভিডের ক্ষেত্রেও দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওয়েভ আসবেই বলে ধরে নিয়েই এগচ্ছেন বেশিরভাগ বিজ্ঞানী। তবে সাধারণ মানুষকে এখনই সচেতন হতে হবে। গরম বলে মাস্ক পরা যাচ্ছে না, বাড়িতে আটকে থাকতে থাকতে ক্লান্ত লাগছের মতো যুক্তিগুলি দেবেন না। আপাতত ভারতও দ্বিতীয় ওয়েভের সঙ্গে লড়াই করছে। তাই খুব সাবধানে থাকুন। মানুন সামাজিক দূরত্ববিধি।
মাস্ক পরুন, টিকা নেওয়া সম্ভব হলে নিয়ে নিন। বয়স্ক আর বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বাড়তি সাবধানতা প্রয়োজন। এখনই বেড়াতে যাওয়া বা ভিড়ের মাঝে যাওয়া খুব বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। মনে করা হচ্ছে যে, দ্বিতীয় ঢেউয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়বে মে-জুন নাগাদ। তার পর ফের বছরশেষের দিকে বা সামনের বছর এই সময়ে তিন নম্বর ওয়েভ আসতে পারে।
দেখতে দেখতে সময় পেরিয়ে যাবে, কিন্তু এখনই নিশ্চিন্ত হবেন না। বাড়ি থেকে কাজের সুযোগ থাকলে তার সদব্যবহার করুন। মাস্ক পরুন, তা আপনাকে ও আপনার আশপাশের সবাইকে নিরাপদে রাখবে।