আবহাওয়া দফতর পরিস্থিতির উপর সর্বক্ষণ সতর্ক নজরদারি চালাচ্ছে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় ঘনিয়ে ওঠার সময় থেকেই, একাধিক বুলেটিনও প্রকাশ করছে সারা দিনে। গতকাল রাতের সর্বশেষ বুলেটিন অনুযায়ী, ইয়াস আজ সকাল পর্যন্ত জলভাগের উপরেই থাকছে, তার পূর্ণ শক্তি সঞ্চয়ের পালা শেষ হতে আরও ২৪ ঘণ্টা সময় লাগবে। তার পর সে উত্তর দিকে এগোতে আরম্ভ করতে পারে ২৫ তারিখ বেলা বাড়লে।
যে কোনও ঘূর্ণিঝড় যতক্ষণ জলের উপরে থাকবে, ততক্ষণ বাড়বে তার শক্তি – সে আরও বেশি বেশি করে জলীয় বাষ্প পুরে নেবে নিজের উদরে। আধুনিক বিজ্ঞান অনেক কিছুই আগে-ভাগে বলে দিতে পারে, কিন্তু প্রকৃতি এমনই এক কঠিন ধাঁধা যে তার পুরোটা বোঝা যায় না – যে কোনও মুহূর্তে দিক বদল করতে পারে ইয়াসও।
তবে ওড়িশার পারাদীপ আর পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপের মাঝ দিয়ে ঝড়ের যাওয়ার কথা – এর একটু এদিক ওদিক হতে পারে – অন্ধ্র বা বাংলাদেশের দিকে চলে যাওয়ার লক্ষণ এখনও দেখা যাচ্ছে না। ২৫ তারিখ ইয়াস যখন বাংলা-ওড়িশার দিকে এগোতে আরম্ভ করবে, তখনও সে জলভাগের উপর দিয়ে অনেকটা রাস্তা আসবে, ফলে শক্তি আরও বাড়বে।
২৬ মে, অর্থাৎ বুধবার সকালে এই ঘূর্ণিঝড় স্থলভাগের কাছাকাছি এসে যাবে, ল্যান্ডফল, অর্থাৎ স্থলভাগে আছড়ে পড়ার সময় ২৬ তারিখ বিকেলে। আবারও বলছি, আলিপুর আবহাওয়া দফতর বা দিল্লির মৌসম ভবন স্যাটেলাইটের ছবি আর সমুদ্রে নজরদারি চালিয়ে যা বলছে, তার সবটাই আন্দাজ – একটু এদিক-ওদিক হতে পারে।
কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী জেলায় আছড়ে পড়ার সময়ে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের আকার নেবে ইয়াস। উপকূল অঞ্চলে ঝোড়ো হাওয়া বইবে আজ রাত থেকে, ঝড় যত এগোবে, হাওয়ার গতি তত বাড়ার কথা। বৃষ্টি শুরু হবে ২৫ তারিখ থেকে, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে তার গতি ক্রমশ বাড়বে। ২৬ তারিখ সকাল থেকে পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর ওড়িশা উপকূল ও বাংলাদেশে ১১০ কিলোমিটার/ ঘণ্টা গতিতে ঝড় শুরু হওয়ার কথা, তার তীব্রতা বাড়তে পারে। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হবে – সেখানে নিম্নচাপের গভীর প্রভাব পড়বে না।
আমফানের সময়ে কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী জেলার উপর থেকে ১৩৫ কিলোমিটার/ ঘণ্টা বেগে ঝড় বয়ে গিয়েছিল, এখন মনে হচ্ছে তার সঙ্গে তুলনা করলে ইয়াস কমজোর হবে। কিন্তু আসলে কী হবে, তার প্রভাবে কতটা ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে না। ২৭ তারিখ থেকে আকাশ ফের পরিষ্কার হবে, সাধারণ নিম্নচাপের মতো বৃষ্টি আর গুমোট আবহাওয়া আশা করা যায়।