টাইম ম্যাগাজিনে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে একটি বেসরকারি সংস্থার গবেষণাপত্র – যার বিষয়বস্তু দেখে নড়ে-চড়ে বসেছেন পরিবেশবিদরা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অদূর ভবিষ্যতে বিরাট বিপর্যয়ের মুখোমুখি দাঁড়াতে পারে মানবসভ্যতা, এ তথ্য বিজ্ঞানীরা অনেকদিন ধরেই আউড়ে যাচ্ছেন।
খুব সুনির্দিষ্টভাবে বলে দেওয়া হয়েছে যে, দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। গবেষকরা গোটা পৃথিবীর ১০০টি শহরের জল, বায়ু, তাপমাত্রা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ইত্যাদি বিষয় নিয়ে সমীক্ষা চালিয়েছেন। দেখা হয়েছে প্রাকৃতিক কারণের ফলে সেখানকার মানুষজনের জীবন ও জীবিকায় কী প্রভাব পড়তে পারে, কত ঘন ঘন সেখানে সুনামি, ভূমিকম্প, ধস নামে ইত্যাদি নানা জটিল বিষয়, তার পর বিপর্যয়ের আশঙ্কার নিরিখে দেওয়া হয়েছে র্যাঙ্কিং।
সেই ক্রমতালিকায় একটা বিষয় পরিষ্কার – জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচাইতে বিপদে পড়বে এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে থাকা দেশগুলি। এদের প্রত্যেকেরই জনসংখ্যার বিপুল চাপে নাভিশ্বাস উঠছে – বেশি মানুষ থাকলেই পানীয় জল কমতে আরম্ভ করে দ্রুত। গাড়ি-কলকারখানা বাড়ায় দূষণের পরিমাণ। দেখা গিয়েছে যে, প্রতিটি শহরই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি দাঁড়ায় বার বার – হয় বিরাট ঝড় বা জলোচ্ছ্বাস আছড়ে পড়ে, না হলে ভূমিকম্প হয় বা আগ্নেয়গিরি জেগে ওঠে!
এই তালিকার একেবারে শীর্ষে রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার নাম। জাকার্তা ক্রমশ বসে যাচ্ছে ভূগর্ভে – কারণ ডিপ টিউবওয়েল। বিপুল জনসংখ্যা নির্বিচারে মাটির গভীর থেকে জল তুলে নিচ্ছে নিত্যদিনের প্রয়োজন মেটাতে, উলটোদিকে বাড়ছে সমুদ্রের জলতলের উচ্চতা। শহরের আশেপাশেই রয়েছে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, সেখানে কয়লা পোড়ে সারাদিন – ফলে বায়ু বিষিয়ে যাচ্ছে। প্রতি বছর ভয়াবহ বন্যায় অবরুদ্ধ থাকে জাকার্তা – এভাবে চলতে থাকলে ২০৫০-এর মধ্যেই তা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে! সরকার ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী অন্য কোথাও সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথাও ভাবছে।
এই ১০০টি শহরের তালিকায় ভারতের মোট ৪৩টি শহরের নাম আছে, দেশ হিসেবে আমরা খুব খারাপ জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি। দিল্লি, চেন্নাই, চণ্ডীগড়ের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। তার পরেই আসবে চিন – চিনের মোট ৩৭টি শহর গভীর বিপর্যয়ের মূখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে এই মুহূর্তে। মূল কারণ বায়ুদূষণ – তবে জলের অভাবও মুখ্য হয়ে দেখা দিচ্ছে ক্রমশ।
আফ্রিকার দেশগুলিও খুব ভালো জায়গায় নেই। সেখানে কলকারখানা কম হওয়ায় বায়ুদূষণের পরিমাণ কম বটে, কিন্তু সেখানে সরকারি পরিকাঠামো বলে কিছু নেই – ফলে সমস্যা সামাল দেওয়ার পরিস্থিতিও নেই। আমেরিকা, ইউরোপের মতো উন্নত বিশ্বের দেশে দূষণ আর জনসংখ্যা, দুইই কম। কিন্তু এশিয়ায় সমস্যা তৈরি হলে তারাও বেশিদিন নিরাপদ থাকবে না!