আপাতত ভারতে চারটি ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে – কোভিশিল্ড, কোভ্যাক্সিন, স্পুটনিক ভি আর সবে ছাড়পত্র পেয়েছে মডের্নার টিকা। যাঁরা সরকারি কেন্দ্র থেকে টিকা নিচ্ছেন, তাঁদের কোভিশিল্ড আর কোভ্যাক্সিনের মধ্যে থেকে একটিকে বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
বেসরকারি ক্ষেত্রে বুকিং করতে গেলে দেখা যাচ্ছে কোভিশিল্ড বেশি অ্যাভেলেবেল। ইদানীং বাজারে এসেছে স্পুটনিক ভি, পাওয়াও যাচ্ছে হাতে গোনা হাসপাতালে। ব্যবহারের অনুমোদন পেয়ে গিয়েছে মডের্নার টিকা – কিছুদিনের মধ্যেই তা পাওয়াও যাবে। এবার প্রশ্ন, যাঁরা এখনও ভ্যাকসিন নেননি, তাঁরা এর মধ্যে থেকে কোনটি বাছবেন?
মনে রাখতে হবে যে সব ক’টি ভ্যাকসিনই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ছাড়পত্র পেয়েছে, ব্যবহারের জন্য নিরাপদ বলে ঘোষিত হয়েছে। তবে ভ্যাকসিন তৈরির সময়ে ভিন্ন টেকনিক ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রযুক্তি
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি কোভিশিল্ড একটি ভাইরাল-ভেক্টর ভ্যাকসিন। শিম্পাঞ্জির শরীরে পাওয়া একটি অ্যাডিনোভাইরাস ব্যবহার করে তা স্পাইক প্রোটিন আর ইমিউন রেসপন্স তৈরি করতে পারে। আপনার শরীরে করোনা ভাইরাস প্রবেশ করলে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিরোধক্ষমতা তাকে আক্রমণ করতে পারবে।
কোভ্যাক্সিনও মোটামুটি এই বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করেই নির্মিত হয়েছে এ দেশেই। একটি ‘ইন-অ্যাক্টিভ’ ভাইরাস টিকার মাধ্যমে আপনার শরীরে প্রবেশ করবে, অ্যাকটিভ ভাইরাস আক্রমণ করলে তা গড়ে তুলবে প্রতিরোধ।
স্পুটনিক ভি রাশিয়ায় তৈরি, তার বেস হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে সাধারণ সর্দি কাশি যে ভাইরাসের কারণে হয়, সেই অ্যাডিনোভাইরাসের একটি দুর্বল স্ট্রেন। তার উপর অবশ্য বিজ্ঞানীরা আরও সংযজন করেছেন এবং স্পুটনিকের ইমিউন রেসপন্সও বেশ ভালো।
এগুলির মধ্যে সবচাইতে আধুনিক বিজ্ঞান মেনে বানানো হয়েছে মডের্নার মেসেঞ্জার আরএনএ ভ্যাকসিন। এই mRNA ভ্যাকসিনগুলিকে অনেক বেশি কার্যকর বলে মনে করেন আজকের বিজ্ঞানীরা। এই ভ্যাকসিনের নির্দেশে আক্রান্ত মানুষের কোষেও করোনা ভাইরাসের মতোই স্পাইক প্রোটিন গজিয়ে উঠবে – ফলে রোগ প্রতিরোধ হবে অনেকটাই জোরালো।
কার্যকারিতা
সনাতন পদ্ধতিতে তৈরি টিকাগুলি অনেক বেশি নিরাপদ বলে মনে করেন এক শ্রেণির বিজ্ঞানী। কোন ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কতটা, তা নিয়ে বিচার করতে বসলে সবার আগে নজর কাড়বে মডের্নার নির্মাতাদের দাবি। গত ডিসেম্বর মাসে শেষ হয়েছে তাদের ট্রায়াল, দেখা গিয়েছে তা করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে ৯১% প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।
কোভিশিল্ডের ক্ষেত্রে ৭০% ক্ষেত্রে সাফল্য নিশ্চিত, ৮-১২ সপ্তাহের মাথায় দু’টি ডোজ নিলে ৯১% নিরাপত্তা মিলবে। অ্যান্টিবডি রেসপন্স খুব ভালো, তাই দু’টি ডোজ নেওয়ার পরে আক্রান্ত হলেও সিভিয়ার ইনফেকশনের আশঙ্কা কম।
কোভ্যাক্সিন থার্ড স্টেজ ট্রায়াল শেষ করার পর ৭৮% সাফল্য নিশ্চিত বলে দাবি করেছে, সেই সঙ্গে দাবি করা হচ্ছে যে টিকা নেওয়ার পর রোগের তীব্রতা বাড়বে না, মৃত্যুহারও কম।
স্পুটনিক ভি-এর ট্রায়াল ও কেস স্টাডি দেখে ৭৮%- ৮৩% সাফল্য সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া যায়।
সাইড এফেক্ট
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার দিক থেকে কোভিশিল্ড আর মডের্না ভ্যাকসিন থাকবে কাছাকাছি। কোভ্যাক্সিনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তুলনায় কম। স্পুটনিকের ক্ষেত্রেও নগণ্য সাইড এফেক্ট দেখা গিয়েছে। তবে সবার যে সাইড এফেক্ট হবেই এমন ব্যাপার নেই। আর হলেও দিন দুয়েকের মধ্যে সব স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ার কথা।
তা হলে কোনটা নেবেন?
যেটা হাতের কাছে পাবেন এবং সাধ্যে কুলোবে, সেটাই নিয়ে ফেলুন ঝটপট। বেশি ভাবার দরকার নেই। প্রতিটি ভ্যাকসিনই আপনাকে সংক্রমণের বিরুদ্ধে কিছু সুরক্ষা জোগাবে। তৃতীয় ঢেউ আসার আগে ভ্যাকসিন নেওয়াটা অনেক বেশি জরুরি।