ইংল্যান্ডে এখন G-7 Summit চলছে, সেখানেই ভারতের কোভিড সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তাদের মতে, প্রথম ঢেউ কমে যাওয়ার পরেই বিন্দুমাত্র সাবধানতা না নিয়ে এ দেশে লকডাউন তুলে নেওয়া হয়েছিল, সেই সঙ্গে জনসাধারণকে সময় থাকতে সতর্ক করতেও ব্যর্থ হয় সরকার।
তারই ফলে সেকেন্ড ওয়েভ অতি শক্তিশালী হয়ে আছড়ে পড়েছিল। পাশাপাশি টিকাকরণের কাজে সরকারের তরফে গাফিলতি তো ছিলই, আর ভাইরাসও এই ফাঁকে নানা ভ্যারিয়ান্ট তৈরি করে ফেলে কার্যত বিনা বাধায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হেলথ এমার্জেন্সি প্রোগ্রামের এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর মাইকেল রায়ান এই কারণগুলির পাশাপাশি বিয়ের মরশুম, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক জমায়েতকেও দায়ি করেছেন।
বলেছেন, “ঠিক এই সময়েই ভাইরাসের ডেল্টা স্ট্রেন তৈরি হয়েছে, আর বহু মানুষের ভিড় তাকে ছড়িয়ে পড়ার ইন্ধন জুগিয়েছে। মানুষ যদি করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য আরও সতর্ক থাকত, তা হলে নিশ্চিত ভাবেই এমনটা হত না। সমস্যা হচ্ছে, রোগটা এবার শহর থেকে গ্রামের দিকে যেতে আরম্ভ করেছে। ভারতের গ্রামগঞ্জে চিকিৎসা ব্যবস্থা কিন্তু বেশ দুর্বল। তাই গ্রাম থেকে রোগ দূর করতে কিন্তু খুব সমস্যা হবে।”
তা হলে আগামীদিনে আমাদের ঠিক কী করা উচিত? WHO-এর ডিরেক্টর জেনারেল টেড্রস আডানোম গেব্রেসিয়েসের মত হচ্ছে, “থার্ড ওয়েভ ঠেকাতে খুব সতর্ক থাকতে হবে। জোর দিতে হবে টিকাকরণে। যা যা বিধিনিষেধ মানার কথা বলা হয়েছে, মানতে থাকুন।”
তাই যাঁরা এ রাজ্যে আরও ১৫ দিন কড়া অনুশাসন জারি হওয়ায় মুষড়ে পড়েছেন, তাঁরা সতর্ক হোন। মনে রাখবেন, সামাজিক অনুশাসন কঠোরভাবে লাগু করলে যে সমাজের কাঠামো নড়বড়ে হয়ে যায়, সেটা সব সরকার জানে। তার পরেও যদি বিধিনিষেধ মানার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে, তা হলে তার পিছনে রয়েছে স্বাস্থ্য বিষয়ক মন্ত্রণাদাতাদের অনুরোধ। এখনও ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়ার হার পুরোপুরি কমেনি, কমেনি মৃত্যুহারও। এই অবস্থায় সব বিধিনিষেধ তুলে নিলে নিশ্চিতভাবেই রোগ নিয়ন্ত্রণের বাইরে বেরিয়ে যাবে।
ভাইরাসের যে কোনও অতিমারির ক্ষেত্রেই ভাইরাসের রিপ্রোডাকশন নাম্বারটা (Re) খুব গুরুত্বপূর্ণ। একজন সংক্রমিত মানুষ যখন একের বেশি সহ নাগরিকের শরীরে ইনফেকশন ছড়িয়ে দিতে পারেন, তখন Re > ১, এই অবস্থায় রোগ ছড়ায় তাড়াতাড়ি। বিধিনিষেধ আরোপ করে চেষ্টা করা হয় Re < ১ রাখার। প্রথমে সংক্রমণের হার কমে, তার পর কমে মৃত্যুহার। মৃত্যুহার না কমা পর্যন্ত বিধিনিষেধ রাখতেই হয়। পাশাপাশি সাধারণ মানুষ যদি সচেতন থাকেন, তা হলে রোগ সহজে নিয়ন্ত্রণে আসে।