একটা কথা স্বীকার করতেই হবে — এই ভরা লকডাউন, কোভিড, আর্থিক সংকট, অগ্নিমূল্য পেট্রোল ইত্যাদির বাজারে একমাত্র ভালো ব্যাপার হচ্ছে ইউরো কাপ! অসামান্য ফুটবল দেখা যাচ্ছে – রাত জাগার ক্লান্তির একশো শতাংশ উসুল!
একটা টুর্নামেন্ট সবে কোয়ার্টার ফাইনাল স্তরে পৌঁছেছে, কিন্তু এর মধ্যেই বাইরে বেরিয়ে গিয়েছে কিলিয়ান এমবাপে, পল পোগবা, আঁতোয়া গ্রিজমান শোভিত ফ্রান্স। রোনাল্ডোর অধিনায়কত্ব ও কয়েকটি অসামান্য গোল পর্তুগালকে শেষ ষোলোয় ঠেলে তুলতে পারেনি। জার্মানির টোনি ক্রুজ – ম্যানুয়াল নয়ারের বিচ্ছুরণ ম্লান হয়ে গেল ইংল্যান্ডের প্ল্যানড ফুটবলের সামনে। তরী ডুবলো অন্যতম ফেভারিট নেদারল্যান্ডসেরও।
ইউরোর ক্ষেত্রে বহু ভক্তই একটা কুসংস্কার মেনে চলেন – জার্মানির বিদায়ের জন্য যে টিম দায়ী হয়, তার হাতেই শেষমেশ কাপ ওঠে। সে ক্ষেত্রে ইংল্যান্ড এবারের ইউরোর ফাইনাল জেতার সবচাইতে বড়ো দাবিদার। কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ড খেলবে ইউক্রেনের সঙ্গে – প্রতিপক্ষ তুলনায় সহজ। তাই তারা সেমিফাইনালে সম্ভবত যাচ্ছেই।
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড়ো অভিযোগ দুটো – মাঝমাঠে ক্রিয়েটিভ ফুটবল খেলা হচ্ছে না। আর অতিরিক্ত ডিফেন্সিভ ফুটবল খেলার কারণে টেম্পো পড়ছে। স্টার্লিং চমৎকার ছন্দে আছেন, ঠিক কথা। কিন্তু হ্যারি কেন আরও বিধ্বংসী না হলে মুশকিল। ইউক্রেন হয়তো তেমন জোরালো প্রতিপক্ষ নয়, কিন্তু তার পর বড়ো টিমের মুখোমুখি হতেই হবে সেমিফাইনালে – তখন এই সব ফাঁকফোকর বেরিয়ে পড়বে।
কিন্তু ইউক্রেন কি সত্যিই এত সহজে হার মানবে? সমস্যা হচ্ছে, ইউক্রেন এত বড়ো আসরে এতদূর এগোতে পারেনি আগে কখনও। বড়ো ম্যাচ বের করার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা একটা অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় – ইউক্রেনের তা নেই। কিন্তু তাদের মাঝমাঠ খুব শক্তিশালী। স্বপ্নের মতো ফর্মে আছেন জিনচেঙ্কো। ইংল্যান্ড তাঁকে আটকে দিতে পারলে ইউক্রেনের দাঁত-নখ ভেঙে যাবে।
আজ রাতের বেলজিয়াম-ইতালি ম্যাচের ভবিষ্যদ্বাণী করা সবচেয়ে কঠিন, কারণ দুটো টিমই এবার মারাত্মক ফর্মে এবং চমৎকার ছন্দে আছে। রোমেলো লুকাকু দুর্ধর্ষ, মাঝমাঠ দারুণ খেলছে। ডিফেন্সে বয়স্ক ফুটবলারের সংখ্যা বেশি — এইটা সমস্যা হতে পারে। আর চিন্তার বিষয় হছে ডিব্রাইনা ও হ্যাজার্ডের চোট।
ইতালির ডিফেন্স এখনও পর্যন্ত দুর্ভেদ্য – চেলিনি আর বনুচিকে হারাতে পারলেও গোলকিপার ডোনারুমার পাশ থেকে বল গোলপোস্টে ঢোকানো বিরাট ব্যাপার! ওদিকে ইনসিগনিয়া, ইমোগ্লে বিপক্ষের বক্সে সারাক্ষণ অ্যাটাক চালিয়ে যান। খুব ভালো উইং প্লে হচ্ছে স্পিনাজোলার নেতৃত্বে। ইতালি এই ইউরো কাপে সবচেয়ে ব্যালান্সড টিম, তারা টানা ৩১টা ম্যাচ জিতেছে। তাতে প্লেয়াররা আত্মতুষ্টিতে ভুগবেন না তো? এমন একটা আশঙ্কা আছে। পাশাপাশি এটাও ঠিক, গত কয়েক বছরে কোনও বড়ো টুর্নামেন্টে ভালো খেলতে পারেনি ইতালি। তাদের মধ্যে নিজেদের প্রমাণ করার খিদেটা দাউদাউ জ্বলছে।
আজকের অন্য কোয়ার্টার ফাইনাল হচ্ছে সুইটজারল্যান্ড বনাম স্পেন। স্বাভাবিকভাবেই স্পেন ফেভারিট। অনেকের ধারণা, সুইটজারল্যান্ড তাদের সেরা খেলা দেখিয়ে ফেলেছে, ফ্রান্সকে হারাতে তারা সর্বশক্তি নিংড়ে দিয়েছে, আর কোনও ম্যাজিক দেখানোর শক্তি তাদের নেই। তবে শাকিরি ভালো ফর্মে, সেফেরোভিচ চমৎকার গোল করেছেন।
স্পেনকে প্রথম দুটো ম্যাচে রীতিমতো নড়বড়ে দেখিয়েছে। ধীরে ধীরে তারা নিজেদের ছন্দ খুঁজে পাচ্ছে। সিজার অ্যাজপ্লিকোয়েতা আর সার্জিও বুসকেটস তৃতীয় ম্যাচ থেকে খেলাটা ধরেছেন। ফলে পেদ্রি উপরে উঠতে পারছেন, লেফট ব্যাক জর্ডি অ্যালবার সঙ্গে তাঁর তালমেল মারাত্মক। সমস্যা হচ্ছে, অভাব আছে প্রপার স্ট্রাইকারের, মোরাটা ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলেন না।
বাকি রইল চার নম্বর কোয়ার্টার ফাইনাল, ৩ জুলাই খেলা হবে চেক রিপাবলিক আর ডেনমার্কের মধ্যে। সবচেয়ে কম আলোচিত দুটো টিম, ম্যাচ নিয়ে বিশেষ আগ্রহও নেই। ডেনমার্কের এরিকসেনই খেলা চলাকালীন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। শক্তি আর দুর্বলতার দিক থেকে দুটো টিমই মোটামুটি সমান সমান।
তাই আমাদের হিসেব হচ্ছে, সেমিফাইনালে স্পেনের বিরুদ্ধে খেলবে ইতালি, আর দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হবে ডেনমার্ক ও ইংল্যান্ড। সম্ভাব্য ফাইনালিস্ট ইতালি এবং ইংল্যান্ড। আপনার হিসেব কী বলছে? জানান কমেন্টে।