মধ্যপ্রদেশের বেশ কিছু অংশের মাটির নিচে আছে হিরের ভান্ডার। পান্না ব্যাঘ্র প্রকল্পের অন্তর্গত কয়েকটি খনি থেকে হাজার হাজার বছর ধরে হিরে তোলা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারে তার চাহিদাও প্রচুর। সমস্যা হচ্ছে, হিরেও তো আসলে কয়লার মতোই জীবাশ্ম জ্বালানি – মাটির নিচে তার ভান্ডার ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে।
পুরোনো খনিগুলো থেকে আর তেমন হিরে মেলে না, তাই জঙ্গলের মধ্যে মধ্যে অজস্র বেআইনি খনিও গজিয়ে উঠেছে। সেখান থেকে অসাধু উপায়ে স্থানীয় মাফিয়ারা হিরে তোলে, অপুষ্টি আর দারিদ্র্যে ধুঁকতে থাকা গ্রামবাসীরা পেটের টানে সেখানে কাজ করে নিরাপত্তা ছাড়াই। বনবিভাগ মাঝে মধ্যেই ধরপাকড় চালায়, তখন তাদের ঠাঁই হয় জেলে।
এই অবস্থায় ছত্তরপুর জেলায় বুন্দের বলে একটি জায়গায় মাটির তলায় হিরের ভান্ডারের খোঁজ মিলেছে। রাজধানী ভোপাল থেকে ২২৫ কিলোমিটার উত্তরপূর্বে বক্সওয়াহার জঙ্গলে মাটির নিচে অন্তত ৩৪ মিলিয়ন ক্যারাট হিরে আছে বলে অনুমান। এর থেকে ১৭৫ কিলোমিটার দূরেও একটি হিরের খনি আছে।
বুন্দেরের খনি থেকে হিরে উত্তোলনের বরাত পেয়েছে এসেল মাইনিং অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড বলে একটি বেসরকারি সংস্থা, যা আদতে আদিত্য বিড়লা গ্রুপের অধীন। ২০২২-এর শেষে তারা ওপেনকাস্ট মাইন আর প্রসেসিং ইউনিট বানিয়ে ফেলতে আগ্রহী। কাজ শুরু হলে এটি এশিয়ার বৃহত্তমখনির মর্যাদা পাবে।
কিন্তু স্থানীয় মানুষ ও পরিবেশবিদরা বেঁকে বসায় কাজটা খুব সহজে এগোচ্ছে না, সুপ্রিম কোর্টে মামলাও ঠোকা হয়েছে। কেন আপত্তি করছেন সাধারণ মানুষ? প্রথমত, এই খনিটি তৈরি করতে গেলে অন্ততপক্ষে ২-২.৫ লক্ষ পূর্ণবয়স্ক গাছ কাটা পড়বে। শাল, তেন্দুপাতা, মহুয়ার ঘন জঙ্গলে বহু বাঘ, চিতাবাঘ, স্লথ ভালুক ও অন্য জন্তুজানোয়ার থাকে, তারা স্থানচ্যূত হবে।
দু’ নম্বর, মধ্যপ্রদেশের যে জায়গায় হিরের খনিগুলো অবস্থিত, সেখানে জলের বড়ো অভাব। তার মধ্যে আবার খনির কাজে প্রচুর জল লাগে। বুন্দেরের কাছেই জলের একটি উৎস আছে, হিরের খনির কাজ শুরু হলেই সেটি বেহাত হবে। তাই স্থানীয় বাসিন্দারা তার ঘোর বিপক্ষে।
তিন, বার বার বলা হচ্ছে, স্থানীয় মানুষকে খনিতে কাজ দেওয়া হবে। কিন্তু সে ভরসায় আর চিঁড়ে ভিজছে না। স্থানীয় গ্রামবাসীরা কাজ পেলেও তাঁদের দৈন্য ঘোচে না কখনওই – মধ্যপ্রদেশের খনি অঞ্চলের শিশু আর নারীদের উপর সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে যে বিরাট একটা অংশ রক্তাল্পতা আর অপুষ্টিতে ভোগে। সাক্ষরতার হারও খুব শোচনীয়।
স্থানীয় যুবসম্প্রদায়ের উদ্যোগে #savebuxwahaforest ক্যাম্পেন শুরু হয়েছে টুইটারে, ক্রমশ গড়ে উঠছে জনমত। আশার কথা হচ্ছে, এর আগে অস্ট্রেলিয়ার মাইনিং জায়ান্ট রিও টিন্টো বুন্দেরের এই খনি থেকে হিরে তোলার বরাত পেয়েছিল, কিন্তু দীর্ঘদিন অপেক্ষার পরেও স্থানীয়দের বিরোধিতায় তারা সে কাজ শুরু করতে পারেনি, শেষমেশ প্রজেক্ট থেকে হাত গুটিয়ে নেয় এই বহুজাতিক সংস্থা। এবারে কী হয় সেটাই দেখার!