আরপিজি গ্রুপের চেয়ারপার্সন হর্ষবর্ধন গোয়েঙ্কা কয়েকদিন আগে মজার ছলেই একটি চিঠির অংশ শেয়ার করেছিলেন সোশাল মিডিয়ার পাতায়। চিঠির বক্তব্য সরল। তাঁর এক কর্মচারীর স্ত্রী আকুল আবেদন নিয়ে হাজির হয়েছেন সংস্থার প্রধানের কাছে – আর্জি একটাই, যেন তাঁর স্বামীকে অফিসে কাজে ডেকে নেওয়া হয় এবার। ওয়ার্ক ফ্রম হোম আরও কিছুদিন চললে তাঁর বিয়েটা টেকানো দুষ্কর হয়ে যাবে।
কেন? না তাঁর উপর এমনিতেই পুরো সংসার ও দুই সন্তানের পূর্ণ দায়িত্ব আছে। তার উপর স্বামী সারাদিন নানা বায়নাক্কা জোড়েন, হাজারবার কফি-জলখাবার দিতে হয়, ঘর-দোর নোংরা করেন। মহিলা এ-ও জানিয়েছেন যে স্বামীরত্নের ভ্যাকসিনেশন হয়ে গিয়েছে এবং তিনি কোভিড সংক্রান্ত সমস্ত বিধিনিষেধ মেনে চলবেন। তা ছাড়া বাড়িতে বসে মোটেই ঠিকঠাক কাজও করছেন না ভদ্রলোক – ওয়ার্ক কল চলাকালীন ঘুমিয়েও নিচ্ছেন টুক করে। তাঁর পক্ষে এভাবে বেশিদিন চারদিক সামাল দেওয়া সম্ভব নয়।
হর্ষ মজার ছলেই চিঠির অংশবিশেষ শেয়ার করে লিখেছিলেন, ‘কী যে জবাব দিই বুঝতে পারছি না!’ তারপর থেকেই নেটিজেনরা কার্যত দু’ ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছেন। পুরুষরা বলছেন, আজকালকার মেয়েরা এতই কুঁড়ে হয়ে গিয়েছেন যে স্বামীর সেবায় মন নেই মোটে – এই কারণে মহিলাকে সরাসরি কোম্পানির মালিকের কাছে অভিযোগ করতে দেখে বিলক্ষণ চটেছেন আরেক দল।
মেয়েদের বক্তব্য, এ দেশের অধিকাংশ পরিবারেই ছবিটা এমন। সবচেয়ে দুঃখের বিষয়টা হচ্ছে, হর্ষের মতো শিল্পপতির হাতে যেহেতু প্রচুর ক্ষমতা, তিনি অন্তত ব্যাপারটাকে এভাবে না দেখে পরিবর্তন আনার কথা ভাবতে পারতেন! উন্নত বিশ্বে তো নারী-পুরুষ হাতে হাত মিলিয়ে ঘরের কাজ সামলেই কেরিয়ার তৈরি করেন, সেখানে আজকের দিনে শিক্ষিত ভারতীয় পুরুষ এই মনোবৃত্তি আঁকড়ে বসে থাকবেই না কেন?
এ কথা ঠিক যে এখনও এ দেশে সংসারের দায়ভার মেয়েদের কাঁধেই চাপিয়ে দেওয়া হয় অধিকাংশ পরিবারে। সেই চাপ সামলাতে গিয়ে নিজের কেরিয়ারের আশা জলাঞ্জলি দিয়েছে কোনও ঝকঝকে পেশাদার, এমন উদাহরণ আমার-আপনার আশেপাশেই আছে। আর এত করেও যে বিন্দুমাত্র সম্মান জোটে না, তা তো বলাই বাহুল্য!
যিনি পরিবারের অর্থের জোগান দেন, তিনি নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু স্রেফ অর্থের জোরে কি আর বেঁচে থাকা যায়? তাই যে নারী সেই অর্থটাকে কাজে লাগিয়ে সুস্থভাবে বেঁচে থাকাটা নিশ্চিত করছেন, তাঁকে সম্মান দিতে আর কত বছর সময় লাগবে আমাদের?