ভ্যাকসিনেশনের কাজ অনেকটাই এগিয়েছে, পাশাপাশি কোভিডের একটার পর একটা ঢেউও আছড়ে পড়ছে – দুটোই সমান সত্যি। একটা সময়ে মনে করা হচ্ছিল জনসংখ্যার একটা বড়ো অংশের ভ্যাকসিনেশন হয়ে গেলে বা অনেকে সংক্রমিত হলে কোভিড দাঁত-নখ হারাবে। কিন্তু কার্যত তো তা হচ্ছে না – কেন?
. হার্ড ইমিউনিটি সংক্রান্ত ধারণাটাকে একদল বিজ্ঞানী বাতিলের তালিকায় ফেলছেন। তাঁদের ধারণা, ভ্যাকসিন দিয়ে রোগের তীব্রতা কমানো গেলেও রোগ ছড়ানো বন্ধ করা যাচ্ছে না।
. নতুন কোনও ভ্যারিয়ান্ট এলেই সব আগল ভেঙে সংক্রমণ ফের বাড়ছে। করোনা ভাইরাস কতদিন নিজের মধ্যে এভাবে মিউটেশন ঘটাবে, তা নিয়ে নিশ্চিতভাবে কিচ্ছু বলা যাচ্ছে না। তাই ডেল্টার চেয়েও শক্তিশালী স্ট্রেন আসতে পারে আগামীদিনে।
. বাচ্চাদের ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ শুরুই হয়নি, এই অবস্থায় খুলে দেওয়া হচ্ছে স্কুল। তাতে সংক্রমণের আশঙ্কা আরও বেড়ে যেচ্ছে।
. সংক্রমণ হলে বা টিকা নেওয়ার পর শরীরে যে ইমিউনিটি তৈরি হচ্ছে, তা কয়েক মাসের মধ্যেই কমতে কমতে তলানিতে ঠেকছে। এই পরিস্থিতিতে কোভিড রোখার কোনও আশাব্যঞ্জক রাস্তা নেই বলেই মনে করছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক।
. ভ্যাকসিন সম্পর্কে বহু ভুল ধারণা এখনও প্রচলিত রয়েছে সমাজে। অনেক জনগোষ্ঠী ভ্যাকসিন নিতে রাজি নন, বাতাস ভারী হয়ে আছে নানা গুজবে।
. বহু মানুষ ভ্যাকসিন কভারেজের বাইরেই রয়ে যাবেন চিরকাল। সব দেশেই কিছু বেআইনি অভিবাসী থাকেন, তাঁদের কাছে বসবাসের কোনও বৈধ কাগজপত্র থাকে না, আছেন লক্ষ লক্ষ রিফিউজি। তাঁরা কীভাবে ভ্যাকসিন নেবেন? যুদ্ধবিক্ষুব্ধ দেশে মানুষ প্রাণ বাঁচাবে, না টিকা খুঁজবে? যে সব দেশ খুব গরিব, তারা ধনী দেশের দাক্ষিণ্যের অপেক্ষায় বসে রয়েছে – এভাবে হার্ড ইমিউনিটি আসবে না।
তা হলে কি স্বাভাবিক জীবনে ফেরার কোনও রাস্তা নেই?
‘নেচার’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে এক এপিডেমিওলজিস্ট দাবি করেছেন যে আগামী বছরখানেকের মধ্যে অন্তত কোভিডের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। আরও বেশ কিছুদিন গেলে তবে হয়তো তা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো সাধারণ কোনও সমস্যায় পরিণত হবে।
কোনওভাবে যদি সংক্রমণ রুখে দেওয়ার উপযোগী কোনও ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়ে যায় এর মধ্যে, তা হলে অবশ্য পরিস্থিতি বদলাতে পারে।
ততদিন পর্যন্ত মাস্ক ছাড়বেন না। একান্ত প্রয়োজন না পড়লে বাড়ির বাইরে বেরোবেন না। বাইরে থেকে এসে হাত ধুয়ে নিন, জামাকাপড় কাচুন। নন-ফারমাসিউটিকাল ইন্টারভেনশনই রোগ ঠেকাতে সব চাইতে কাজের।