২০২০ সালের মার্চ থেকে এখনও পর্যন্ত একবারও যাঁদের কোভিড হয়নি, তাঁরা ঠিক কোন মন্ত্রে মারণ করোনা ভাইরাসকে পরাস্ত করেছেন? সেটা জানতেই শুরু হয়েছে নয়া গবেষণা। বিজ্ঞানীদের আশা, এই গবেষণার ফলাফলই হয়তো আগামী দিনে কোভিডের হাত থেকে বাঁচার উপায় বাতলে দেবে!
ব্রিটেনসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশ ও আমেরিকায় কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ৯০ শতাংশ মানুষ – এঁদের অনেকেই অবশ্য অ্যাসিম্পটোম্যাটিক ছিলেন, অর্থাৎ শরীরে কোভিডের লক্ষণ ছিল না। এ দেশেও সেরো সার্ভের রিপোর্ট জানিয়েছে যে জনসংখ্যার বিরাট অংশের শরীরেই কোভিড প্রতিরোধের ক্ষমতা গড়ে উঠেছে, অর্থাৎ কোনও না কোনও সময়ে তাঁরা কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। বিশেষ করে ওমিক্রনের দাপট জনসংখ্যার বিরাট অংশকে ঘায়েল করতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু এমনও অনেকে আছেন যাঁদের এই ভাইরাস স্পর্শ করেনি একবারো।
আমেরিকার রকফেলার বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লিনিকাল মাইক্রোবায়োলজিস্টদের একটি টিমের তত্ত্ববধানে শুরু হয়েছে ‘কোভিড রেজিস্ট্যান্স’ সংক্রান্ত গবেষণা। ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ সংবাদপত্রকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মুখ্য গবেষক আন্দ্রাস স্পান জানিয়েছেন, এই আন্তর্জাতিক গবেষণায় যোগ দিয়েছেন অন্তত ৭০০ জন এমন মানুষ যাঁদের এই দু’ বছরে কোভিড মোটেই স্পর্শ করতে পারেনি।
এঁদের মধ্যে এমন অনেক স্বাস্থ্যকর্মী আছেন যাঁরা মাস্ক ছাড়া কোভিড রোগীর দেখাশোনা করেছেন – তার পরেও তাঁদের শরীরে না ফুটেছে রোগের লক্ষণ, না রক্তপরীক্ষায় করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে। গবেষকদের একাংশের ধারণা, এঁদের জিনে হয়তো এমন কোনও মিউটেশন আছে যা এই ভাইরাসকে ঠেকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
কেউ কেউ আবার বলেছেন, সম্ভবত এঁদের নাক, গলা আর ফুসফুসে রিসেপ্টরের অভাব আছে – এই রিসেপ্টরের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস আমাদের দেহে প্রবেশ করেছে, প্রজনন ঘটিয়েছে, এমনকী দীর্ঘদিন টিকে গিয়ে লং কোভিডেও ভুগিয়েছে বহু মানুষকে।
একদল গবেষকের ধারণা, কোভিড ১৯ দাঁত-নখ বের করার আগেই এঁরা সমগোত্রীয় কোনও ভাইরাসের সংস্পর্শে এসেছিলেন এবং তখনই শরীরে গড়ে উঠেছে জোরালো প্রতিরোধক্ষমতা। কারণ যাই হোক না কেন, এই গবেষণা যদি সফল হয়, তা হলে আগামীদিনে নানা ভাইরাসঘটিত রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
তবে একটা খটকাও রয়েছে – মাস্কের ব্যবহার ও ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে যাঁরা খুব সতর্ক, তাঁরা কোভিডকে ঠেকিয়ে রাখতে পেরেছেন সহজে। এই পরীক্ষায় তাঁদের অ্যাসেসমেন্টের সময়ে কোন কোন মাপকাঠি মেনে চলা হবে? এ প্রশ্নের উত্তর এখনও পরিষ্কার হয়নি।