ডলারের তুলনায় ভারতীয় টাকার দামে রেকর্ড পতন হয়েছে গত সোমবার – এক ডলারের বিনিময়মূল্য ছাড়িয়েছে ৭৭ টাকা। এই পরিস্থিতিতে অশনি সঙ্কেত দেখছেন অর্থনীতিবিদরা – কারণ এই হারে টাকার দাম পড়লে বিদেশ থেকে আমদানির খরচ বাড়বে, তার সরাসরি প্রভাব পড়বে দেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়-ভাণ্ডারে।
. তার ফলশ্রুতি হিসেবে বাজারে কাঁচামালের দাম বাড়বে, পণ্য হয়ে উঠবে মহার্ঘ্য। সাধারণ মানুষ খরচে রাশ টানতে কেনাকাটা কমিয়ে দেবে। যে সব ব্যবসায় ঝুঁকি বেশি, সেখানে চট করে কেউ বিনিয়োগ করতে চাইবেন না।
. তবে পাশাপাশি এটাও ঠিক যে, যাঁরা পণ্য রফতানি করেন, তাঁদের আয় বাড়বে, তাই বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার ভরে উঠতেও খুব সময় নেবে না।
. কেন টাকার দাম পড়ছে এভাবে?
আমেরিকা সুদের হার বাড়িয়েছে মূদ্রাস্ফীতি ঠেকাতে, ফলে সেখানকার বাজারে বিনিয়োগ বাড়ছে। ভারতে বিনিয়োগকারী বহু বিদেশি সংস্থা শেয়ার ছেড়ে দিয়ে আমেরিকার বাজারে লগ্নি করছে। ফলে শেয়ার বাজার আর টাকার দাম দুটোই কমেছে। আমেরিকার ফেডারেল রিজার্ভ বাড়ায় ডলারের দামও বেড়েছে, আগামী দিনে আরও খানিক বাড়বে। ডলারের দাম আগামীদিনে ৭৮ টাকাও ছাড়াতে পারে।
চিনের কোভিড পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হচ্ছে – এখনও সেখানকার বহু শহরে কড়া লকডাউন চলছে, ব্যবসা-বাণিজ্য শিকেয় উঠেছে। চিনের আর্থিক পরিস্থিতি ঠিক না হলে ভারতসহ বিশ্ব বাজারে আর্থিক টানাটানি থাকবেই – এ কথা ভুললে চলবে না যে চিনের বিদেশি মুদ্রার সংগ্রহ বিশাল – ভারতের জাতীয় আয়ের চেয়েও বেশি! চিন আপাতত ‘জিরো-কোভিড’ পলিসি নিয়েছে, সুতরাং পরিস্থিতি এখনই শুধরাচ্ছে না।
. তবে আশার কথা হচ্ছে, অনেক বিশেষজ্ঞই মনে করেন যে ভারতের বাজারে যেহেতু নানা সংস্থার আইপিও ছাড়া হচ্ছে, তাতে পরিস্থিতি খুব খারাপ হবে না। এলআইসি আইপিও থেকেও ভালো সাড়া পাওয়া গিয়েছে – তাই এখনই হতাশ হওয়ার কিছু নেই।
. আপাতত কিছুদিন শেয়ার মার্কেট আপনাকে নিরাশ করবে – সেদিক থেকে প্রস্তুত থাকুন। আর গাড়ি বা লাক্সারি পণ্যের দাম বাড়বে। বিশেষ করে যে সব পণ্যের ক্ষেত্রে বিদেশ থেকে আমদানি করা উপাদান একান্ত প্রয়োজনীয়, সেগুলি কিনতে গেলে পকেট একটু বেশিই হালকা হবে। আর যে কোনও লোনের ক্ষেত্রে বেশি ইএমআই গুনতে হবে।