তৃতীয় ওয়েভ আছড়ে পড়ার আগেই কোভিড চিকিৎসার নয়া গাইডলাইন প্রকাশ করল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। এখন থেকে মৃদু উপসর্গ থাকলে কোভিডের মূল চিকিৎসা হবে প্যারাসিটামল দিয়েই। সেই সঙ্গে কাশি থাকলে বা অন্যান্য লক্ষণ দেখা দিলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ইনহেলার ব্যহারের পরামর্শ দিতে পারেন।
হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন বা অ্যাজিথ্রোমাইসিন/ ডক্সিসাইক্লিনের ব্যবহার একেবারেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ বছর এপ্রিল মাসেই এ দেশের সবচেয়ে বিক্রিত ওষুধ ছিল অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ ফ্লাভিপিরাভির, এখন থেকে আর তার ব্যবহারও হবে না চিকিৎসায়। যাঁরা ওষুধের আকাল হতে পারে ভেবে বাড়িতেই স্টক রেখেছিলেন, তাঁরা সাবধান। এর কোনওটাই কাজে লাগবে না কিন্তু!
গত কয়েক মাসে যাঁরা কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের উপসর্গ মৃদু হলেও অন্ততপক্ষে ৬-৮টি ওষুধ দেওয়া হয়েছে। কার্যত দেখা গিয়েছে যে, অধিকাংশ ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ আছে। যাঁরা অতি জটিল উপসর্গসমেত হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন, তাঁদের জন্য অবশ্য গাইডলাইন আলাদা।
তবে সেক্ষেত্রেও চিকিৎসা হবে মূলত অক্সিজেন আর স্টেরয়েড দিয়েই। এই দুটি প্রয়োগ করার পরেও যদি রোগীর অবস্থা ভালো না হয়, তা হলেই টসিলিজুমাব দিতে হবে। কোন কারণে রেমডেসিভিয়ার দিতে হবে রোগীকে, তা স্পষ্ট করে প্রেসক্রিপশনে লিখে দিতে হবে কোনও সিনিয়ার চিকিৎসককে। সেখানে তাঁর নাম আর সই থাকা বাধ্যতামূলক। রোগীর বাড়ির লোককে নয়, স্বাস্থ্যমন্ত্রকের বিধি মেনে ওষুধ কিনতে হবে হাসপাতালকেই।
ডেক্সামেথাসনের মতো স্টেরয়েডের যথেচ্ছ ব্যবহারের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার কথাও বার বার বলা হচ্ছে – তার কারণেই মূলত বেড়ে যাচ্ছে রক্তে চিনির পরিমাণ এবং মিউকর ছত্রাকের আক্রমণ বাড়ছে। স্টেরয়েড ঠিক সময়ে বন্ধ করে দিতে হবে। একগাদা ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট বা জিঙ্ক খাওয়ারও কোনও প্রয়োজন নেই। তাতে যে খুব লাভ হচ্ছে, এমন কোনও প্রমাণ মেলেনি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বিজ্ঞানী ডা. সৌম্যা স্বামীনাথন ভারতীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেছেন, এতদিনে পরীক্ষিত ও প্রমাণিত চিকিৎসা পদ্ধতির প্রতি আস্থা রেখেছে ভারত সরকার।
এবার প্রশ্ন, আপনার যদি জ্বর আসে বা রুটিন পরীক্ষা করাতে গিয়ে কোভিড পজিটিভ রিপোর্ট বেরোয়, তা হলে কী করবেন? যদি কোনও উপসর্গ না থাকে, তা হলে নিজেকে ঘরবন্দি করে নিন, তা হলেই হবে। সর্বক্ষণ মাস্ক পরে থাকবেন, প্রতি ৬ ঘণ্টা অন্তর একবার করে জ্বর আর অক্সিজেন স্যাচুরেশন মাপুন। সেই সঙ্গে বার বার হাত ধুতে হবে।
মাইল্ড উপসর্গের ক্ষেত্রেও নিয়ম এক, তবে কাশি হলে ডাক্তারকে জানান। অ্যাস্থমা রোগীদের ব্যবহারের জন্য যে বুডেসোনাইড ইনহেলার দেওয়া হয়, সেটা দিলেই আরাম মিলবে। তবে যদি দেখেন অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমছে বা তেড়ে জ্বর আসছে, তা হলে কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।
টানা ছ’ মিনিট মাঝারি গতিতে হাঁটার চেষ্টা করুন হাতে পালস অক্সিমিটার লাগিয়ে। যদি হাঁফ লাগে, শ্বাসকষ্ট হয়, অক্সিজেনের মাত্রা কমতে থাকে এবং না বাড়ে তা হলে কিন্তু হাসপাতালে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।