কিছুদিন ধরেই বাতাসে ভাসছে এই তত্ত্বটি – কোভিডের তৃতীয় ঢেউ নাকি মারণ আঘাত হানবে শিশুদের উপর। একদল ডাক্তার, বিশেষ করে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ বলছেন, এমন একটি সিদ্ধান্তের কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই, তাই এখন থেকে আতঙ্কিত হওয়ারও কোনও মানে হয় না।
আর একদল চিকিৎসক, যাঁদের মধ্যে প্রখ্যাত কার্ডিয়াক সার্জন দেবী শেঠিও আছেন, মনে করেন যে করোনা ভাইরাস যেভাবে মিউটেট করছে, তার একটা প্যাটার্ন আছে। প্রথমবার এই রোগ আক্রমণ হেনেছিল বয়স্কদের বিরুদ্ধে, দ্বিতীয় ঢেউ কাবু করেছে তুলনায় অল্পবয়সিদের। তাই তিন নম্বর দফায় এমন একদল মানুষ ঘায়েল হবে যারা আগেরবার জীবাণুর থাবা এড়িয়ে গিয়েছে – সেই হিসেবে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি।
এই সেকেন্ড ওয়েভেই বহু শিশু আক্রান্ত হয়েছে, হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে অনেককে। এক শ্রেণির চিকিৎসক মনে করছেন, শিশুদের ইমিউনিটি বেশি, তা করোনা ভাইরাসকেও অবলীলায় হারিয়ে দিচ্ছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই। অন্যদিকে আবার এটাও ঠিক যে, এই বাড়তি ইমিউনিটির কারণেই বেশিরভাগ বাচ্চাই অ্যাসিম্পটোম্যাটিক হবে – ফলে তাদের থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়বে অতি দ্রুত। মিউটেটেড ভাইরাস যে খেলা দেখিয়েছে এবার, তাতে এটা তো বোঝাই যাচ্ছে যে রোগ সংক্রমণের হার ক্রমশ বাড়ছে এবং অতি দ্রুত বাড়ছে?
এমনিতেই এ দেশে আইসিইউ বেডের আকাল, পেডিয়াট্রিক আইসিইউয়ের সংখ্যা আরওই কম। তা ছাড়া শিশুর চিকিৎসাপদ্ধতিই আলাদা। হাসপাতালে কোনও বাচ্চাকে ভর্তি করা হলে সঙ্গে তার মাকে রাখতে হবে সর্বক্ষণ – সে সব সামলানোর পরিকাঠামো ক’টা হাসপাতালে আছে?
তার চেয়েও বড়ো কথা, শিশু-কিশোরদের টিকাকরণের আওতায় রাখেইনি ভারত সরকার। ফলে তাদের জন্য কোনওরকম সুরক্ষার বন্দোবস্তই নেই! এই অবস্থায় শিশুকে সুরক্ষার দায় নিতে হবে অভিভাবকদেরই।
. নিজের ও বাড়ির সব প্রাপ্তবয়স্কের টিকাকরণ করিয়ে নিন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।
. বাচ্চাকে নিয়ে বাড়ির বাইরে যাবেন না, তার সঙ্গে বন্ধুবান্ধবের দেখা করান ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে।
. সমস্ত কোভিড প্রোটোকল মেনে চলুন অক্ষরে অক্ষরে।
. একেবারে সদ্যোজাত শিশুদেরও কোভিড ধরা পড়েছে মহারাষ্ট্রের কয়েকটি জেলায়। বাড়িতে বাচ্চা থাকলে তার ঘরে বেশি লোকজন ঢুকতে দেবেন না, নিয়ম করে জীবাণুমুক্ত করাও একান্ত জরুরি।
. বাচ্চার হালকা জ্বর দেখলেও বয়স্কদের তার থেকে দূরে রাখুন।
একটা কথা মনে রাখবেন, এই পরিস্থিতি হবেই – এমনটা খুব নিশ্চিত হয়ে বলা যায় না। সবটাই আন্দাজ। তাই প্যানিক করবেন না, সতর্ক থাকুন। ভাইরাসকে হারিয়ে দেওয়ার জন্য সাবধান থাকাটা একান্ত জরুরি। কোনওভাবেই নিজের গার্ড ডাউন করবেন না, বাচ্চাকে নিয়ে ভিড়ের মাঝে যাবেন না।