আফগানিস্তানে তালিবানদের অত্যাচারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের পিঠ ঘুরিয়ে দাঁড়ানোর দৃশ্যও প্রকাশ্যে আসছে রোজ। তেমনই এক অভূতপূর্ব জমায়েত দেখেছে কাবুল, গত ১৯ আগস্ট। তালিবানরা ক্ষমতা দখলের পর আফগানিস্তানের জাতীয় পতাকাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু ১৯ আগস্ট প্রকাশ্য রাজপথে বেরিয়ে একদল তরুণ-তরুণী সোচ্চার প্রতিবাদ জানিয়েছেন, মিছিলে হেঁটেছেন দেশের জাতীয় পতাকা নিয়ে। জোর গলায় বলেছেন, ‘আমাদের পতাকা, আমাদের পরিচয়’।
এই মিছিলের অন্যতম সংগঠক ছিলেন ক্রিস্টাল বায়াত। ক্রিস্টাল এই কঠিন পরিস্থিতিতেও মুখ ঢাকেননি, বোরখা পরেননি। সংবাদমাধ্যমকে নাম বদলে দেওয়ার অনুরোধ জানাননি। ক্যামেরার সামনে সোচ্চারে নিজের বক্তব্য রেখেছেন। ক্রিস্টালের সাহস দেখে এগিয়ে এসেছেন আরও বহু মানুষ, মাত্র কিছুজনকে নিয়ে শুরু হওয়া মিছিল ক্রমশ কয়েকশো মানুষের জমায়েতে পরিণত হয়েছে।
প্রতিবাদীদের এই মিছিলে লাঠি চালিয়েছে তালিবান, মিছিল কিন্তু থামেনি তাতে, ছত্রভঙ্গ হয়েও যায়নি। কুড়ির কোঠায় পা দেওয়া ক্রিস্টাল বলেছেন, “আমি জীবনে কখনও তালিবান দেখিনি। গত ১৯ বছর ধরে পড়াশোনা করেছি মন দিয়ে, নিজের লক্ষ্যে পৌঁছতে চেয়েছি। আজ আমার চোখের সামনে সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে পড়ে আছে। তাই আর ভয় পাই না।”
আরও বলেছেন, “কী হবে ভয় পেয়ে? সব ক’টা তালিব আমায় বলেছে, ‘আর ক’টা দিন তোরা স্বাধীন, তার পর… দেখিস না তারপর কী হয়!’ কী করবে? মেরে ফেলবে তো? অত্যাচার করবে খুব? করুক। মরেই যখন যাবো, তখন আর ভয় পেয়ে কী হবে? গুলি খাওয়ার আগে পর্যন্ত নিজের অধিকারের জন্য গলা ফাটাই অন্তত! আমার মধ্যে দিয়েই এ দেশের লক্ষ লক্ষ নারীর কথা শুনুক সারা পৃথিবী! মেয়েরা যে ছেলেদের চেয়ে কম সাহসী হয় না, সেটাও সবার বোঝা দরকার। বেঁচে থাকতে কাউকে আমার মৌলিক অধিকার কাড়তে দেবো না।”
কাবুলে ভিড় ছত্রভঙ্গ করতে শূন্যে গুলি চালিয়েছে তালিবানরা। অন্য প্রদেশে যেখানে প্রতিবাদ হচ্ছে, সরাসরি ভিড়ের মধ্যেই গুলি চলছে, মারা যাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। নিজেকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করা আমরুল্লা সালে বলেছেন, “জাতীয় পতাকা হাতে যাঁরা পথে নামছেন তাঁদের বীরের সম্মান দিন দেশবাসী, স্যালুট ঠুকুন। এঁরা পালানোর চেষ্টা করেননি, মাতৃভূমিকে রক্ষা করার জন্য লড়ার শপথ নিয়েছেন।”
প্রশ্ন উঠছে, কীসের ভিত্তিতে তালিবানরা বার বার হুঁশিয়ারি দিচ্ছে যে আর ক’টাদিন বাদেই মুছে যাবে সব স্বাধীনতা? আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, ৩১ আগস্টের মধ্যে আমেরিকান সেনা তাদের ছাউনি তুলে সরে যাবে আফগানিস্তান থেকে। সম্ভবত তার পর থেকেই স্বমূর্তিতে ফিরবে তালিবানরা। কিন্তু ৩১ তারিখের মধ্যে সব মার্কিন নাগরিককে দেশের বাইরে বের করা সম্ভব নয়, তাই দরকারে আরও কিছুদিন সে দেশে তাদের সেনা থাকতে পারে। তবে আমেরিকার যে সব ব্যাঙ্কে তালিবানদের জন্য টাকা গচ্ছিত আছে, সেগুলি বন্ধ করে দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন।