শহরতলি থেকে যাঁরা কাজের খোঁজে কলকাতায় আসেন, তাঁরা সবাই হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন লোকাল ট্রেন সার্ভিস চালু না হলে যাতায়াত কতটা মুশকিল হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু বাড়িতে বসে থাকলে তো আর পেট চলবে না – বিশেষ করে যেখানে আনলক প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে!
প্রায় দিনই খবরে প্রকাশিত হচ্ছে রেলযাত্রীদের অবরোধ আর বিক্ষোভের ছবি, স্টাফ স্পেশাল ট্রেনে বাদুড়ঝোলা ভিড় ঠেঙিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে রোজ আহত হচ্ছেন কিছু মানুষ। এই পরিস্থিতি কবে শুধরোবে জানার আগ্রহ আছে সবারই।
জীবিকার প্রয়োজনে মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়েও বাইরে বেরোচ্ছেন। কর্মস্থলে পৌঁছতে সাধ্যের বাইরে গিয়ে খরচ করতে হচ্ছে, তা না হলে কাজ টিকিয়ে রাখা যাবে না। এই ফাঁকে ট্যাক্সি, অ্যাপ ক্যাব, অটো দেদার ভাড়া হাঁকছে – যাতায়াতে খরচ আর সময় দুটোই বেশি লাগছে। ফলে সর্বস্তরের যাত্রীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। প্রায়দিনই কোনও না কোনও স্টেশনে ঝামেলা বাধছে, তার মোকাবিলায় তৈরি থাকতে হচ্ছে রেলরক্ষী বাহিনীকেও।
পরিস্থিতি একটু শোধরানোর জন্য প্রায় সব শাখাতেই কিছু ট্রেন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার, সোমবার থেকে শিয়ালদহ ডিভিশনে আরও অন্তত ১০০টি বিশেষ ট্রেন চালাবে রেল মন্ত্রক, তার ফলে স্পেশাল ট্রেনের সংখ্যা ২৫৯ থেকে বেড়ে ৩৫৯ হবে। হাওড়া শাখায় এতদিন চলত ১৫৪টি ট্রেন, এখন চলবে ২১৪টি। মেট্রোর সংখ্যা ৪০ থেকে বাড়িয়ে ৬২ করা হচ্ছে।
কিন্তু এতেও সমস্যা মিটবে না। তার চেয়েও বড়ো কথা, সংক্রমণ আটকাতে ৩০ জুনের পরেও ট্রেন পরিষেবা স্বাভাবিক করার বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী। এখনও সেকেন্ড ওয়েভ পুরোপুরি কমেনি, তারই মাঝে একটা দুটো করে ডেল্টা স্ট্রেনে আক্রান্তের খোঁজ মিলছে। এই অবস্থায় শহরতলির সঙ্গে ট্রেন যোগাযোগ একেবারে স্বাভাবিক হয়ে গেলে সংক্রমণ রোধ করার রাস্তাই থাকবে না বলে তিনি মনে করেন।
আইসিএমআরের ডিরেক্টর জেনারেল বলরাম ভার্গব গত শুক্রবারেই প্রেস ব্রিফিং দিয়েছেন যে থার্ড ওয়েভ নিয়ে মাতামাতি করতে গিয়ে আমরা সেকেন্ড ওয়েভকে গুরুত্ব দিচ্ছি না আর। ভুললে চলবে না যে, সংক্রমণের সংখ্যা কমলেও এখনও তা শূন্যে গিয়ে ঠেকেনি, বেশ কিছু জেলায় সংক্রমণ বাড়ছে ক্রমশ। তাই এখনই সমস্ত বিধিনিষেধ তুলে দিয়ে গণ পরিবহন একেবারে স্বাভাবিক করে দেওয়াটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে।
মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকুন, ৩০ তারিখে সব বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার আশা নেই। এখনও বেশ কিছুদিন চলাফেরায় নানা রেস্ট্রিকশন থাকবে। তা নিয়ে বিরক্ত হয়ে লাভ নেই – এটুকু না করলে সংক্রমণের হার কমানো যাবে না।