কেন্দ্রীয় সরকারের সাফ বক্তব্য, লকডাউন একেবারে শেষ উপায় – একান্ত বাধ্য না হলে দেশ জুড়ে তা প্রয়োগ করা হবে না। রাজ্যগুলির উপর স্পষ্ট নির্দেশিকা আছে, দরকারে ছোটো ছোটো কনটেনমেন্ট জোন তৈরি করে সংক্রমণ রোখার ব্যবস্থা করতে হবে, তাতে কাজ না হলে তবেই লকডাউন, না হলে অর্থনীতি ফের মুখ থুবড়ে পড়বে।
উলটো দিকে আবার দেশে-বিদেশে সাঙ্ঘাতিক আতঙ্ক তৈরি হয়েছে করোনা ভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়ান্টকে ঘিরে। অতি সংক্রামক এই জীবাণুর কারণে মৃত্যুহার বেড়েছে, প্রায় সুস্থ হয়ে ওঠা রোগী কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করছেন। একের পর এক দেশ ভারত থেকে আসা যাত্রীদের প্রত্যাখ্যান করছে, এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ বাতিল করছেন ফ্লাইট।
বাজারে জোর কানাঘুষো, ইদের পরেই হয়তো এ রাজ্যেও আংশিক বা পূর্ণ লকডাউন হতে পারে। আপাতত লোকাল ট্রেন বন্ধ করে, বাস-মেট্রো অর্ধেক চালিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। দোকান-পাট খোলা থাকছে খানিক সময়, হোটেল-রেস্তোরাঁ-পর্যটন-বিনোদন ব্যবসা চূড়ান্ত ক্ষতির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। কিন্তু রাজ্য সরকার ঠিক কী করবে, তা জানা নেই কারওই।
এই পরিস্থিতিতে কার্যত বোমা ফাটিয়েছেন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকাল রিসার্চ (ICMR)-এর ডিরেক্টর জেনারেল ডা. বলরাম ভার্গব। নিউজ এজেন্সি রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে একেবারে প্রথম সারির এই সংস্থার প্রধান স্পষ্ট জানিয়েছেন, অন্তত ছয় থেকে আট সপ্তাহ গোটা দেশে পূর্ণ লকডাউন না হলে সেকেন্ড ওয়েভ নিয়ন্ত্রণে আসবে না।
ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক মিডিয়া অভিযোগ তুলছে যে ভারত সরকার মৃতের হিসেবে কারচুপি শুরু করেছে – সমস্ত রাজ্যও এই ষড়যন্ত্রে শামিল। কোভিডের ভয়াবহতার আসল পরিস্থিতিটা চোখের আড়ালেই রয়ে যাচ্ছে। রয়টার্সের দাবি, ভারতের ৭১৮টি জেলার মধ্যে তিন-চতুর্থাংশই ধুঁকছে সেকেন্ড ওয়েভের দাপটে।
বড়ো শহরে তাও চিকিৎসা পরিকাঠামো আছে, ছোটো শহরগুলির অবস্থা ভয়াবহ। অক্সিজেন, ওষুধের হাহাকার, বেডের অভাব, রাজনৈতিক চাপান-উতোরের সঙ্গে লড়তে লড়তে ডাক্তাররাও ক্লান্ত। তার মধ্যে ডা. ভার্গব এভাবে মুখ খোলায় চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। কোনও উচ্চপদস্থ সরকারি কর্তা এভাবে কথা বলেননি এই ইস্যুতে। খবরে প্রকাশ, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে নানা মহল থেকে লকডাউনের প্রস্তাব পাঠানো হলেও তা বারবার নাকচ হয়েছে এর আগে।
ডা. ভার্গবের বক্তব্য, যে সব জেলায় পজিটিভিটি রেট ১০%-এর বেশি, সেখানে অন্তত ৮ সপ্তাহের লকডাউন একান্ত প্রয়োজনীয়। সেকেন্ড ওয়েভের শুরুতে দিল্লির পজিটিভিটি রেট একবার ৩৫%-এ চলে গিয়েছিল, এখন সেটা নেমেছে ১৭%-এ, আর এটা লকডাউনের ফলেই সম্ভব হয়েছে।
ডা. ভার্গবের দাওয়াই —
.যত বেশি মানুষ বাইরে বেরোবেন, তত দ্রুত ছড়াবে ভাইরাস। লকডাউন সেই রাস্তা বন্ধ করার একমাত্র রাস্তা।
. কিছু অসমসাহসী এই অবস্থাতেও জন্মদিন, বিয়ের মতো উৎসবে মেতে উঠছেন। বিয়েবাড়ি হচ্ছে – তাতেই রোগের বাড়বাড়ন্তও দেখা যাচ্ছে। এখন ভিড় থেকে দূরে থাকতেই হবে।
. নিজের কমন সেন্স কাজে লাগান। আপনি বাড়িতে থাকলে, সব কোভিড বিধি মানলেই একমাত্র পরিবারের সবাই নিরাপদে থাকবে। একান্ত দরকার না পড়লে বাড়ি থেকে বেরোবেন না।