ফেসবুকের প্রধান মার্ক জাকারবার্গ গত সপ্তাহে ঘোষণা করেছেন, তিনি নিজে আপাতত অফিসে ফিরবেন না। বাড়িতে থেকেই যে দিব্যি ভালো কাজ করা যায়, তা বুঝে ফেলেছেন এই ক’দিনে – সুতরাং আগামী অন্তত ছ’মাস বাড়ি থেকেই কাজকর্ম সামলাবেন। তার পর সমসসীমা আরও বাড়তে পারে।
সেই সঙ্গে কর্মীদেরও বাড়িতে বসে কাজ করা সম্ভব হলে সেটাই করতে উৎসাহ দিয়েছেন মার্ক – কথা দিয়েছেন যে সেইমতো স্যালারি অ্যাডজাস্ট করে দেওয়া হবে। পাশাপাশি অবশ্য বলেছেন যে, যাঁরা হার্ডওয়্যার সামলান বা রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করেন, তাঁরা অফিস করবেন আগের মতোই। সামনের সপ্তাহ থেকে কিছু কর্মী এনে আগের মতো অফিস শুরুও করা হবে।
মার্কের যুক্তি হচ্ছে, প্রযুক্তি দিন দিন উন্নত হচ্ছে, বাড়িতেও খুব ভালো ইন্টারনেট কানেকশন মিলছে আজকাল। অফিসে যাতায়াতের ঝক্কি না নিয়েও ভিডিয়ো কলিংয়ের মাধ্যমেই জরুরি কথাবার্তা বলা বা মিটিং সেরে ফেলা যায়। এমন অনেক কর্মী আছেন, যাঁরা একটা ল্যাপটপের সাহায্যে যেখানে খুশি সেখান থেকে কাজ করতে পারেন। তাঁদের তো খামোকা রোজ যাতায়াতের হ্যাপা সামলানোর দরকার নেই!
ধরুন, কোনও ফেসবুক কর্মীর বাড়ি কানাডায় – তিনি লকডাউনে আটকে পড়েছেন সেখানে। তাতে কিন্তু কাজ আটকায়নি – এই ঘোষণার পর তিনি আবেদন করলে কোম্পানি তাঁকে কানাডায় থেকে কাজ করার অনুমতি দিয়ে দেবে। ইউরোপের কর্মীরাও এই সুবিধে পাবেন। তবে অফিসের পাট পুরোপুরি চুকে যাবে না – মাঝে মাঝে সেখানে যাওয়া, পুরোনো সেট আপে কাজ করার ব্যবস্থাও চালু থাকবে। এই মিশ্র ব্যবস্থাটাকেই ‘হাইব্রিড অফিস’ বলা হচ্ছে।
এ কথা বেশ কিছুদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল যে আগামীদিন হাইব্রিড ওয়ার্ক কালচারটাই জনপ্রিয় হবে — ফেসবুক সেই রাস্তাটাই দেখাচ্ছে। তার ফলে এক শ্রেণীর কর্মীর সুবিধে হবে নিশ্চিতভাবেই। যাঁদের বাড়িতে বয়স্ক বাবা-মা বা ছোটো বাচ্চা আছেন, তাঁরা এই সুবিধে পেলে উপকৃত হবেন। বহু মহিলা স্রেফ সংসারের দায়দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে চাকরি করতে পারেন না, বাড়ি থেকে কাজ করার সুযোগ মিললে সুবিধে হবে তাঁদেরও।
তার চেয়েও বড়ো সত্যিটা হচ্ছে, প্যানডেমিক কিন্তু এখনও যায়নি পুরোপুরি। টিকাকরণের কাজ শেষ হতে এখনও বহু দেরি আছে, ততদিন মাঝে মাঝেই সংক্রমণ বাড়বে, তখন ফের ঘরবন্দি হয়ে থাকতে হবে। তা ছাড়া বাড়িতে থেকে কাজ করার মতো একটা সেটআপ আপাতত সব কর্মীই তৈরি করে ফেলেছেন। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সামনে দাঁড়িয়ে বেশিরভাগ সংস্থা সেটাও ভাঙতে নারাজ। তাছাড়া কর্মীরা বাড়িতে থেকে কাজ করলে সংস্থার বেশ কিছু খরচও বাঁচে, সেটাও সত্যি!
কিন্তু ওয়ার্ক ফ্রম হোম মানুষের সোশাল স্কিলকে আরও ভোঁতা করে দিচ্ছে, সেটাও একইরকম ঠিক। বিশেষ করে স্কুল বা কলেজের ছাত্রছাত্রীরা দীর্ঘদিন বাড়িতে বন্দি হয়ে থাকতে থাকতে মানসিক চাপে পড়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া বেশিরভাগ মানুষই দুই বা তিন কামরার ফ্ল্যাটে থাকেন। সেখানে স্বামী-স্ত্রীর কাজের জায়গা, বাচ্চার লেখাপড়ার ব্যবস্থার পাশাপাশি বয়স্কদের বিশ্রামের জায়গা বের করাও তো মুশকিল! কিন্তু আপাতত যা পরিস্থিতি, তাতে এর অন্যথা হওয়ার কোনও আশাই নেই। তাই নিজেকে প্রস্তুত করুন।