ভারতবর্ষ অতি প্রাচীনকাল থেকেই হাতে বোনা তাঁত বস্ত্রের জন্য বিখ্যাত। ইদানীং অবশ্য হাতে বোনা তাঁতের বাজারের অনেকটাই দখল করে নিয়েছে মিলের শাড়ি, কিন্তু তাতেও হ্যান্ডলুমের গুরুত্ব কমেনি। সৌন্দর্য ও আভিজাত্য, দু’দিক থেকেই তার তুলনা মেলা ভার। তবে হ্যাঁ, হাতে বোনা তাঁতের দাম একটু বেশি হয়। স্বাভাবিকভাবেই তা হওয়ার কথা – একজন মানুষ হয়তো দিন দুয়েকের পরিশ্রমে কাপড়টি বুনছেন। তাঁর প্রাপ্য মজুরি তো কলে বোনা কাপড়ের চেয়ে বেশি হবেই!
তবে মিলের কাপড়কেই হাতে বোনা বলে গছিয়ে দেওয়ার চলটাও কিন্তু আছে! ভালো সরকারি এম্পোরিয়াম বা তাঁতের কাপড় বিক্রিতে সুনাম আছে, এরকম সংস্থার থেকেই পোশাকের মেটিরিয়াল বা শাড়ি কিনুন। হ্যান্ডলুমের কাপড় চেনার আরও কয়েকটি উপায় আছে, পরেরবার শপিংয়ে গেলে তা ট্রাই করে দেখবেন অবশ্যই।
পাওয়ারলুমে বোনা শাড়ির ফিনিশ অনেক মসৃণ হয়। হাতে বোনা শাড়িতে সুতোর গিঁট থাকবে, পাড়ের দিকে গিয়ে সুতো জড়িয়ে যেতে পারে। সরু, মোটা বুনন মিলিয়ে শাড়ি খসখসে হয়ে যায়। হাতে বোনা শাড়ি চিনতে হলে পাড়ের দিকটা ভালো করে খতিয়ে দেখুন। কোণের দিকটা পিন লাগিয়ে টানটান করে নেওয়া হয়, তাই আঁচলের শেষ দিকে পিনের দাগ দেখতে পাবেন। পাওয়ার লুমে তা থাকে না।
হাতে বোনা শাড়ি আপনার শরীরে বসবে খুব সুন্দরভাবে। বৈদ্যুতিক তাঁতে বোনা শাড়ি তুলনায় কড়কড়ে হয়, তার ড্রেপ ভালো হয় না। কেনার আগে শাড়ি শরীরে জড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকলে অবশ্যই তা কাজে লাগান। পাওয়ারলুমে জরি বোনা হলে সেটাও কেমন একটা কাঠ কাঠ হয়ে থাকে। হাতে বোনা পিওর জরি কিন্তু খুব নরম হয়। হ্যান্ডলুম দীর্ঘদিন ভালো থাকবে, ক্রমশ ঔজ্জ্বল্য হারাবে পাওয়ারলুম।
সব সময় শাড়ির আঁচলের উলটো পিঠটা ভালো করে দেখা উচিত। হাতে বোনা তাঁতের পিছন দিকটাও একইরকম সুন্দর, পাওয়ারলুমের ফিনিশ অত ভালো হয় না। আঁচলের পিছনে অজস্র আলগা সুতো ঝোলে, অপরিচ্ছন্ন দেখায়।
হ্যান্ডলুম শাড়ির অলঙ্কার হচ্ছে তার মোটিফ। আমাদের দেশে নানা ধরনের মোটিফ হয়, বাংলার নিজস্ব কল্কা তার অন্যতম। হাতে বোনা তাঁতে তার সৌন্দর্য যেমন ফোটে, পাওয়ারলুমে তার সামান্যতম দেখতে পাবেন না। যে কোনও হাতে বোনা নকশা পারফেক্ট হয়, পাওয়ারলুমে তোলা নকশায় প্রাণ থাকে না।
পাওয়ারলুমে শাড়ি বোনার সময় সুতো যেভাবে টানা হয়, তাতে তা পাতলা হয়ে যায়। ফলে একই মেটিরিয়াল দিয়ে শাড়ি বোনা হলেও হ্যান্ডলুমের ওজন সব সময়েই বেশি হয়। তা ছাড়া হ্যান্ডলুম কাপড় হাতে নিয়ে ভালো করে দেখলেই বুঝবেন, বুননের ফাঁক দিয়ে বাতাস চলাচল করতে পারে, পাওয়ারলুম অনেক ঠাসবুনোট।
ফোটো: ইনস্টাগ্রাম