শুরুতেই দুই কন্যের কথা না বললে বিষয়টা বুঝতে অসুবিধে হবে। প্রথমজনের নাম নাওমি ওসাকা (ডানদিকে)। আধা জাপানি-আধা কৃষ্ণাঙ্গী এই টেনিস তারকা এবার ইউএস ওপেন জিতেছেন।
যে সময়ে এবার আমেরিকান ওপেন শুরু হয়েছিল, তখন গোটা মার্কিন মুলুক তোলপাড় হচ্ছে #blacklivesmatter আন্দোলনে। প্রতিদিন দেশের নানা প্রান্ত থেকে উঠে আসছে কালো মানুষদের উপর শ্বেতাঙ্গদের অত্যাচারের নানা কাহিনি।
নাওমিকে প্রবল নাড়া দেয় এই আন্দোলন, কালো মেয়ে হয়ে টেনিস খেলতে গিয়ে নিজের জীবন দিয়ে তিনি বুঝেছেন খেটে খাওয়া মানুষের যন্ত্রণা। একবার ভেবেছিলেন প্রতিবাদে নাম তুলে নেবেন প্রতিযোগিতা থেকে। কার্যত যা করলেন, তাতে আরও বড়ো ধাক্কা লাগল।
নাওমি প্রতিটি ম্যাচের দিন স্টেডিয়ামে পা রাখতেন ইংরেজিতে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ শার্ট পরে, মুখের মাস্কে লেখা থাকত সাদা পুলিশের অত্যাচারে শহিদ হওয়া কোনও কালো মানুষের নাম।
নিজের ইনস্টা পোস্টে নাওমি যা লিখেছেন, তার সারমর্ম খানিকটা এইরকম, ‘ভেবে দেখলাম, আমি না খেললে কিচ্ছু বদলাবে না। তার চেয়ে এমন কিছু করা যাক, যাতে লোকে ব্যাপারটা ভুলে না গিয়ে কথা বলতে আরম্ভ করবে। এখন সেটাই সবচেয়ে জরুরি।’
আর ঠিক সেটাই হল। তাই গে প্যারেডে সমকামীরা হাজির হচ্ছেন রামধনুরং মাস্ক পরে, ভোটের প্রচারপর্ব হোক বা দেশপ্রেমের প্রমাণ – মুখাবরণ হয়ে উঠছে মনের আয়না।
আর একজনের টি-শার্টের গ্রাফিক বক্তব্য নিয়ে আমাদের দেশে বেশ আলোচনা হচ্ছে – তাঁর নাম রিয়া চক্রবর্তী। সবাই জানেন, নানা বিতর্কিত কারণে রিয়া এখন সংবাদের শীর্ষে রয়েছেন।
গ্রেফতারের আগে যখন জেরার জন্য নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছিলেন, তখন একদিন একটা টি শার্ট পরেন, যার বুকে লেখা ছিল, ROSES ARE RED/ VIOLETS ARE BLUE/ LET’S SMASH PATRIARCHY/ ME AND YOU.
খুব অল্প সময়ের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায় এই মেসেজ, সোনম কাপুরসহ আরও নানা সেলেবের সোশাল মিডিয়ায় জায়গা করে নেয়। বিতর্কের ঝড় ওঠে, একটি শব্দও উচ্চারণ না করেই নজর কেড়ে নেন রিয়া।
তবে সব সময়ে যে এমন কড়া বার্তা দেওয়ার জন্যই যে ফ্যাশনের আশ্রয় নেওয়া হয় তা নয়, মন ভালো করে দেওয়ার মতো কথাও লেখা থাকে টি-শার্টে এবং ইদানীং মাস্কে। তবে কোভিড নিয়ন্ত্রণে এসে গেলে ফের রাজত্ব করবে টি-শার্টই, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই!
অনেকেই বলেন যে টি-শার্ট হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী পোশাক। জানেন তো, বিশ শতকের গোড়ায় মূলত ফ্যাক্টরির শ্রমিকদের অন্তর্বাস হিসেবে টি-শার্টের জন্ম হয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে তা পরে বাইরে বেরোতেন না কেউ। মেয়েরা টি-শার্ট পরা আরম্ভ করেছেন আরও অনেক পরে।
চলচ্চিত্রের ইতিহাস নিয়ে যাঁরা গবেষণা করেন তাঁদের অনেকের বক্তব্য, মার্লন ব্র্যান্ডো প্রথম তারকা যিনি রুপোলি পরদায় টি-শার্টকে পুরোদস্তুর পোশাকের মর্যাদা দেন। এই শতকের পাঁচের দশকে প্রিন্টার এসে যাওয়ার পর তার উপর ছাপা হতে থাকে মেসেজ।
এখন টি-শার্টের লেখা বা ছবি দেখে আপনার ব্যক্তিত্ব, পছন্দ-অপছন্দ সবটাই চেনা যায়। কে বলে, ফ্যাশনের সম্পর্ক কেবল বাহ্যিক সৌন্দর্যের সঙ্গে? তা দিন বদলের হাতিয়ারও হয়ে উঠতে পারে।
ফোটো: ইনস্টাগ্রাম