আপনি কি নতুন নতুন পোশাক কিনতে ভালোবাসেন? লেটেস্ট সমস্ত ফ্যাশন ট্রেন্ড ছাপ রাখে আপনার ওয়ারড্রোবে? আর পোশাক পুরোনো হলে তা নিশ্চয়ই দান করে দেন? বাতিল অব্যবহারযোগ্য পোশাক একটা সময়ে পরিণত হয় বর্জ্যে। ফ্যাশন নিয়ে মাতামাতি যত বাড়ছে, তত এই ধরনের বর্জ্যের পরিমাণও বাড়ছে পৃথিবীতে – সেই ভারে শস্য-শ্যামলা ধরাতলের নাভিশ্বাস ওঠার অবস্থা!
আর সেই জায়গা থেকেই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা শুরু করেছে ইতালির এক অখ্যাত, একদা দরিদ্র বসতি। সারা দুনিয়ায় ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে প্রাতো শহরের নাম, মানুষ জানতে পারছে কীভাবে পুরোনো, বাতিল পোশাককে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলা যায়। একটা সময়ে নাকি প্রাতোর মানুষের হাতে নতুন পোশাক কেনার পয়সাও থাকত না। তখন থেকেই এখানকার বাসিন্দারা পুরোনো কাপড় জোগাড় করে তা থেকে উল তৈরির এক পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। সেই উল থেকেই তৈরি করা হত নতুন, স্টাইলিশ ড্রেস।
একটা সময়ে দেখা গেল, এখানকার অধিকাংশ অধিবাসীই পারিবারিক সূত্রে শিখে ফেলেছেন রিসাইক্লিং সংক্রান্ত কোনও না কোনও বিদ্যে। আর পুরোনো কাপড় মিলছে অতি সস্তায় এবং সহজে। তখনই ধীরে ধীরে এখানে রিসাইক্লিং শিল্প গড়ে উঠতে আরম্ভ করে। এখন অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে গোটা দুনিয়ার মোট রিসাইক্লিংয়ের ১৫ শতাংশই হয় প্রাতোতে!
জানতে চান কাজটা কীভাবে হয়? পুরোনো কাপড় কেনা হয় প্রথমে, তার পর রং আর মেটিরিয়াল অনুযায়ী চলে তার বাছাই। এবার কাপড়গুলিকে খুব ছোটো ছোটো টুকরোয় কেটে নেওয়া হয়। তার পর মেশিনে বিশেষভাবে প্রক্রিয়াকরণ করে তৈরি করা হয় উল। তা দিয়ে যেমন খুশি কেতাদুরস্ত পোশাক বানিয়ে নেওয়া সম্ভব। এই পুরো প্রক্রিয়ায় যতগুলি সহযোগী শিল্পের প্রয়োজন, সব গড়ে উঠেছে প্রাতোয় – বদলে গিয়েছে এলাকার আর্থিক কাঠামো।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই মুহূর্তে প্রতি বছর গোটা দুনিয়ায় যে পরিমাণ কাপড় উৎপন্ন হচ্ছে, তার সমান বর্জ্য তৈরি হলেই পৃথিবী সে চাপ নিতে পারবে না। তাই রিসাইক্লিং ছাড়া গতি নেই। একটা প্রাতোয় হবে না, ধীরে ধীরে পুরো ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিকে এই পথে হাঁটার কথা ভাবতে হবে।
সুখের বিষয় হচ্ছে, পরিবেশবান্ধব ফ্যাশনের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। রিসাইকল নিয়ে আগ্রহ তৈরি করতে বিশেষ ভূমিকা নিচ্ছেন সেলেব্রিটিরাও। তাঁরা রেড কার্পেটের মতো অনুষ্ঠানে পুরোনো পোশাক পরছেন স্বচ্ছন্দে — ব্রিটেনের রাজবধূ কেট মিডলটন তো এ ব্যাপারে সবার আগে থাকবেন! তা ছাড়া, এভাবে উল তৈরি করা সম্ভব হলে ভেড়াদের উপর চাপ কমবে, সেই সঙ্গে কমবে ডাইয়ের ব্যবহার। কাপড় রং করার কাজে যে রাসায়নিক ডাই লাগে, তা নদীর জলে মিশে বাড়ায় দূষণের মাত্রা।
এবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন – আপনি কীভাবে এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারেন? পোশাক কেনার সময়ে রিসাইকলড তকমা দেখে কিনুন। অহেতুক নতুন জামাকাপড় কিনবেন না, মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ করে পরলে পুরোনো জামাকাপড়ও দেখতে খুব সুন্দর লাগে। নিজের মতো করে বর্জ্যের পরিমাণ কমানোর চেষ্টা করুন, তাতে ভালো থাকবে পৃথিবীর স্বাস্থ্য। সেকেন্ড হ্যান্ড পোশাকের কন্ডিশন ভালো হলে সেটাও কিনতে পারেন।