সেই মার্চ থেকে ঘরবন্দি মানুষ, পরিস্থিতি এখনও বিশেষ বদলায়নি। যাঁরা অফিস যেতে বাধ্য হচ্ছেন, তাঁদের কাছেও সাজগোজের গুরুত্ব তেমন নেই। কোনওক্রমে বাড়ি ফিরে মুখোশমুক্ত হয়ে আরামদায়ক পোশাক পরাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাশন স্টেটমেন্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাইরে যাওয়ার উপায়ই নেই, তাই বেকার দামি পার্টি ড্রেস কিনে হবেটাই বা কী? তার চেয়ে স্মার্ট কাফতান আর সুন্দর পাজামা কেনা অনেক ভালো!
তার উপর আবার করিনা কাপুর খান, মালাইকা আরোরার মতো সেলেব্রিটিরা তাঁদের লকডাউন সাজে কাফতানকে এতটাই গুরুত্ব দিলেন যে অন্য সব পোশাকের জনপ্রিয়তাকে ছাপিয়ে গেল তা। ঢিলেঢালা, হালকা, আরামদায়ক এই পোশাক পাওয়া যায় নানা দামে, পছন্দমতো সুতির কাপড় কিনে বানিয়েও নিতে পারেন পাড়ার দর্জির দোকান থেকে। খুব ভালো এমব্রয়ডারি করা সিল্কের জমকালো কাফতান পাওয়া যায় কাশ্মীর হ্যান্ডলুম এম্পোরিয়ামে – তাও কিনতে পারেন।
জানেন তো, কাফতানের প্রচলন কিন্তু মধ্যযুগ থেকেই ছিল। পারস্য, তুরস্কে অভিজাত পুরুষরা কাফতান পরতেন ১৪ শতাব্দী থেকেই। অটোমান সুলতান আর তাঁর সভাসদদের কাফতানের রং, নকশা, প্রিন্ট দেখে চেনা যেত কে কোন পদে কর্মরত। ভেনিস, জেনোয়া, ইরান, ভারত, চিন থেকে সেরা মানের কাপড় এনে ইস্তানবুলে তৈরি করা হত সম্রাটের পোশাক। সিরিয়ার আমির আর বেদুইন শেখরাও শীতের পোশাক হিসেবে উলের কাফতান পরতেন।
মেয়েদের কাফতান পরার রেওয়াজটা কিন্তু শুরু হয়েছে অনেক পরে, ষোড়শ শতাব্দী থেকে। আলজেরিয়া, মরক্কোর অভিজাত পরিবারের মহিলারা ভেলভেট বা দামি সিল্কের উপর এমব্রয়ডারি করা কাফতান পরতেন। তা আধুনিক ফ্যাশনের মূল স্রোতে ঢোকে হিপিদের হাত ধরে। হিপিরা নানা ধরনের ট্রাডিশনাল পোশাক নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতেন, তার উপর কাফতান পরাটা খুব আরামদায়কও। তাই তা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে খুব সহজে।
সুইমস্যুটের উপর ডিজাইনার কাফতান পরার একটা রেওয়াজ ছিলই, রবের্তো কাভাল্লির মতো বড়ো ব্র্যান্ড তো তা দীর্ঘদিন বানাচ্ছে। রিসর্টওয়্যার হিসেবেও তার গ্রহণযোগ্যতা ছিল। বিশেষ করে গলার কাছে এমব্রয়ডারি বা সিকুয়েন্সের কাজ করা কাফতান তো মহিলারা আগেও পরতেন।
আসলে ফ্যাশন মানেই নতুন বোতলে পুরোনো মদ। মাঝে মাঝেই এভাবে ফিরে আসে একদা জনপ্রিয় কোনও ট্রেন্ড। সবাইকে যে তা অনুসরণ করতেই হবে, তার কোনও মানে নেই কিন্তু! তার চেয়ে নিজের পছন্দকেই অগ্রাধিকার দিন।
ফোটো: ইনস্টাগ্রাম