বয়সের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন আসে মানুষের হাঁটাচলার ধরনেও। বিশেষ করে প্রৌঢ় আত্মীয়স্বজন বা মা-বাবা হাঁটতে গেলে টলমল করছেন, পড়ে যাচ্ছেন যেখানে-সেখানে — এমনটা প্রায়ই দেখা যায়।
কিন্তু যে সব সন্তান দূরে থাকেন এবং বয়স্ক সদস্যদের নানা দরকারে বাড়ি থেকে বেরোতেই হয়, তাঁরা পড়েন মহা সমস্যায়। আসলে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরে এমন কিছু পরিবর্তন আসে, যার ফলে ধীরে ধীরে ব্যালান্স রাখা মুশকিল হয়ে যায়। কিছু সাধারণ লক্ষণ আছে, সেই কারণগুলো খতিয়ে দেখুন। তার পর ডাক্তারকে জানান। তাঁর পরামর্শমতো চললে বেশিদিন সচল থাকবেন এঁরা।
. মাথা ঘোরা, বমিভাব, লিফট বা গাড়িতে চড়লে মোশন সিকনেসের সমস্যা। আমাদের কানের ভিতরের অংশ বা ইনার ইয়ারে ক্যালশিয়াম ক্রিস্টাল থাকে। সেগুলিই ব্যালেন্স বজায় রাখতে সাহায্য করে। বয়স হলে এই ক্রিস্টালগুলি ইনার ইয়ার থেকে সরে যায়, তখনই মাথা ঘোরার সমস্যা দেখা দেয়। বিছানায় পাশ ফিরে শোওয়া বা রাতে বাথরুম যাওয়ার জন্য আচমকা বিছানা থেকে উঠলেও মাথা ঘুরতে পারে।
. ভেস্টিবিউলার নিউরাইটিস নামক এক ধরনের ভাইরাসঘটিত প্রদাহ ইনার ইয়ারের ব্যালেন্স নষ্ট করে দেয়। সেক্ষেত্রেও মাথা ঘোরা, বমিভাব, হাঁটাচলায় সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেক সময় মাথা নিচু করে বই বা কাগজ পড়তেও সমস্যা হয়।
সোজা কথায় — মাথা ঘোরার সমস্যা হতে আরম্ভ করলেই ডাক্তার দেখাতে হবে। যদি কেউ কান ভোঁ ভোঁ করা বা কম শোনার মতো সমস্যার কথা বলেন, তা হলেও সতর্ক হোন। বেশি বয়সে কানের সমস্যা হলেই কিন্তু হাঁটাচলায় অসুবিধে হবে। এমনকী গাড়িতে লম্বা রাস্তা যেতে গিয়েও এঁরা অসুস্থ বোধ করতে পারেন।
. যাঁরা দীর্ঘদিন হার্টের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদেরও কিন্তু মাথা ঘোরার অসুবিধে দেখা দিতে পারে। হয় কী, বয়স হলে হার্ট আর আগের মতো রক্ত পাম্প করতে পারে না। ফলে বসা বা শোওয়া অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়াতে গেলেও চট করে মাথা ঘুরে যেতে পারে। পার্কিনসনস বা মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস থাকলে তো আর কথাই নেই!
এই পরিস্থিতি কি কাটিয়ে ওঠা যায়?
একেবারে সারানো না গেলেও কিছুটা ভালো নিশ্চয়ই থাকা যায়।
প্রথমত, বয়স্কদের সচল রাখুন। রোজ খানিকটা হাঁটাচলা করা দরকার। লাঠি হাতে নিয়ে বারান্দায় হাঁটলেও হবে। হাড়ের সমস্যা না থাকলে সিঁড়ি ভাঙাও যায়।
দুই, যোগাভ্যাস বা তাই-চি ব্যালেন্স ভালো রাখে। ৪০-এর কোঠায় যাঁরা আছেন, তাঁরা আজ থেকেই তা প্র্যাকটিস করুন।
তিন, এঁদের ঘরে রাতের বেলা একটা ছোটো আলো জ্বালিয়ে রাখুন। বয়স্কদের রাতে ভালো ঘুম হয় না, বাথরুম যেতে হয়, তখন অন্ধকার থাকলে আরও সমস্যা হবে।
চার, একবার এই ধরনের অসুবিধে আরম্ভ হলে একা রাস্তায় বেরোতে দেবেন না। কারণ এঁদের দৃষ্টিশক্তিও কমতে আরম্ভ করে। অজস্র চলন্ত গাড়ি, শব্দ ইত্যাদি বিভ্রান্ত করে দিতে পারে। বাইরে বেরোতে হলে অবশ্যই সঙ্গে কারও থাকা উচিত। গাড়ি চালাতে ইচ্ছে হলে অনুমতি দিন, তবে পাশে থাকুন।
পাঁচ, এটা কিন্তু সত্যি সিরিয়াস শারীরিক সমস্যা। বাবা-মাকে খামোকা বকাবকি করবেন না। যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তার দেখান।