যবে থেকে কোভিডের বাড়াবাড়ি শুরু হয়েছে, তবে থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে নানা ঘরোয়া সমাধান। তাতে রক্তে অক্সিজেন স্যাচুরেশনের মাত্রা বাড়ানো থেকে আরম্ভ করে কোভিডের নিরাময় পর্যন্ত সব দাওয়াইয়ের হদিশ আছে। তবে এগুলো কি আদৌ কাজের?
অক্সিজেন স্যাচুরেশন মাপার জন্য যে পালস অক্সিমিটার ব্যবহার হয়, তাতে মোটামুটি ঠিকঠাক রিডিং মেলে। খেয়াল করবেন, আমরা ‘মোটামুটি’ কথাটা ব্যবহার করেছি। আপনি কোন ব্র্যান্ডের জিনিস ব্যবহার করছেন, কীভাবে রিডিং নেওয়া হচ্ছে, তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করে। আগে তো আর ঘরে ঘরে অক্সিমিটার ব্যবহার হত না, তার উৎপাদনও ছিল কম। কোভিড শুরুর পর থেকে রাতারাতি চাহিদা বেড়েছে, অনেক নিম্নমানের প্রডাক্টে ছেয়ে গিয়েছে বাজার। তাতে সব সময় পারফেক্ট রিডিং আসে না।
পালস অক্সিমিটারে ৯৫-এর নিচে রিডিং দেখলেই ঘাবড়ে যাবেন না। মেশিন খুলে নিয়ে আবার একবার আঙুলে লাগান। দেখুন আঙুলে নেলপলিশ, মেহেন্দি, তেল-হলুদের দাগ লেগে আছে কিনা। তাতে কিন্তু রিডিং ঠিকঠাক আসে না। তর্জনীতে কম আসছে রিডিং? তা হলে একবার মধ্যমায় যন্ত্রটা লাগিয়ে দেখুন। ডান হাতের জায়গায় বাম হাতের আঙুলে পরান। রোগী শুয়ে থাকলে তাঁকে বসিয়ে নিন। কারণ বসে থাকাকালীন আপনার ফুসফুস ভালোভাবে প্রসারিত হতে পারে।
কর্পূর, ইউক্যালিপটাস তেল, জোয়ান ইত্যাদি কাপড়ের পুঁটলিতে বেঁধে গরম করে জোরে জোরে শুঁকলে অক্সিজেন স্যাচুরেশন বাড়ে, এরকম একটা তত্ত্ব অনেকদিন ধরেই ঘুরছে বাজারে। একটা কথা ঠিক যে জোরে জোরে কোনও জিনিস শুঁকে তার পর অক্সিমিটার ব্যবহার করলে অক্সিজেন স্যাচুরেশন বেশি আসবেই – তার কারণ হচ্ছে বড়ো করে শ্বাস নিলে শরীরে বেশি অক্সিজেন প্রবেশ করবে, তাই রিডিংও বেশি আসবে। এতে ঘরোয়া সমাধানের কোনও ভূমিকা নেই।
কিন্তু তাই বলে যে রোগীর সত্যিই শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, অক্সিজেন স্যাচুরেশন কিছুতেই ৯০-এর উপরে উঠছে না, ক্রমশ সে নেতিয়ে পড়ছে, তাকে কর্পূর ইত্যাদি শোঁকানোর কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। হ্যাঁ, বহু ভেপোরাইজারে কর্পূর বা ইউক্যালিপটাস তেলের ব্যবহার হয়, তাতে বন্ধ নাক খুলতে পারে, সাময়িকভাবে হয়তো একটু ভালো লাগবে – কিন্তু এই সব ছেলেখেলা করতে গিয়ে বেশি দেরি হয়ে গেলে মুশকিল!
মনে রাখবেন
আজকাল সবাই কম-বেশি প্যানিক মোডে আছেন। জ্বর-কাশি হলেই সর্বক্ষণ হাতে অক্সিমিটার লাগানোটা অনেকের অভ্যেস হয়ে গিয়েছে। তাতে হয়তো অনেক জীবন বাঁচছে, আবার বহু মানুষ প্রবল আতঙ্কিত হয়ে যাচ্ছেন। আপনার ডাক্তারের কথা শুনে চলুন। রোজ নিয়ম করে ভেপার নিন, গার্গল করুন। তাতে ভালো লাগছে কিনা দেখুন। হালকা শ্বাসকষ্ট, কয়েক পা হেঁটেই হাঁফিয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিলেও আগে তাঁকেই জানাতে হবে।