গাড়ির কাচে ছিল বিচিত্র নকশা করা, কোথাও বা প্রিভেসির জন্য গাঢ় ফিল্টার লাগানো। আর তার ফলেই খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ড্রাইভার দেখতে পাননি পিছন থেকে গাড়ি কত দ্রুত গতিতে ধেয়ে আসছে। জাজমেন্টের সামান্য সমস্যায় ঘটে গিয়েছে বিরাট দুর্ঘটনা, প্রাণহানি হয়েছে।
কলকাতা শহর ও তার উপকণ্ঠে ঘটে যাওয়া বেশ কয়েকটি সাম্প্রতিক দুর্ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে পুলিশ। হাইওয়েতেও আকছার এমন অ্যাক্সিডেন্ট হয়। বিশেষ করে শীতের দিনের ভোরে আর সন্ধের পর রাস্তায় কুয়াশা থাকে। তখন এমনিই দৃশ্যমানতা কমে যায়, তার উপর যদি আপনার গাড়ির সামনের বা পিছনের কাচে নকশা করা বা ঘন ফিল্টার লাগানো থাকে, তা হলে দুর্ঘটনায় পড়া বিচিত্র নয় একেবারেই!
অনেকেই গাড়ির পিছনের পার্সেল ট্রেটা খুব সুন্দর করে সাজিয়ে রাখেন – নানা রকম সফট টয়, কুশন, বাচ্চাদের খেলনা, পাতাবাহার গাছ দেখতেও ভালো লাগে। কিন্তু তাতে ড্রাইভার পিছনের গাড়ি দেখতে পাবেন তো? এ বিষয়টা কিন্তু আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে।
এ কথা অস্বীকার করার জায়গা নেই – আমাদের দেশে যা গরম থাকে বছরের বেশিরভাগ সময়, তাতে জানলায় টিন্টেড গ্লাস লাগানো না থাকলে এসি পর্যন্ত ঠিকভাবে কাজ করে না। চড়া রোদ পড়ে গাড়ি গরম হয়ে যায়। সেই সঙ্গে ফিল্টার খানিকটা প্রিভেসিও দেয়, তার ফলে অন্যরা ভিতরে কে আছেন দেখতে পান না। কিন্তু তার ফলে যে নানা বিপদ হতে পারে সেটাও মাথায় রাখতে হবে। কালো কাচে ঢাকা গাড়িতে অপহরণ বা অন্য নানা দুষ্কর্মও হয় কিন্তু!
এবার দেখে নেওয়া যাক, মোটর ভেহিকালস অ্যাক্ট কী বলছে। ১৯৮৮ সালের মোটর ভেহিক্যালস অ্যাক্ট অনুযায়ী, গাড়ির সামনের ও পিছনের উইন্ডশিল্ডে ৭০% ভিস্যুয়াল লাইট ট্রান্সমিশন থাকা আবশ্যক। অন্য কাচের ক্ষেত্রে অন্তত ৫০ শতাংশ দৃশ্যমানতা থাকতেই হবে। সাধারণত গাড়ি কেনার পর ক্রেতারা কাচে সান ফিল্ম লাগিয়ে নেন, নির্মাতা কিন্তু নিয়ম মেনেই চলেন।
২০১২ সালে সুপ্রিম কোর্ট একটি নির্দেশিকায় গাড়ির কাচে সান ফিল্ম লাগানো বা টিন্টেড গ্লাস ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞাই জারি করেছিল। সে সময় একের পর এক দুষ্কর্ম হচ্ছিল কালো কাচ লাগানো গাড়ির পেটের ভিতর – সেটা আটকানোই ছিল মূল উদ্দেশ্য।
একটা কথা খেয়াল রাখবেন, খুব গাঢ় রঙের কাচ লাগানো থাকলেই যে সূর্যের আলো বা ইউভি রশ্মি একেবারে আটকে দেওয়া যাবে, এমন ধারণা একেবারেই ভুল। কী মানের টিন্টেড গ্লাস লাগানো হচ্ছে, তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করে। তাই দরকারে একটু বেশি খরচ করে ভালো জিনিসটি কিনুন। আরামের পাশাপাশি সরকারি নিয়ম মেনে চলুন, তাতে আপনার নিরাপত্তাই নিশ্চিত হবে।