আপনার দাঁত আর মাড়ির স্বাস্থ্য ভালো নেই? তার মানে আপনার সার্বিক স্বাস্থ্যের অবস্থাও খারাপ – এটাই সারসংক্ষেপ। মুখ গহ্বরের স্বাস্থ্য খারাপ হওয়া মানে আপনার ডায়াবেটিস বা হার্টের অবস্থা খারাপ হতে বেশি সময় লাগবে না, অন্য নানা অসুখ-বিসুখও হতে পারে।
কীভাবে খারাপ হয় দাঁতের স্বাস্থ্য?
আজকাল কেক-বিস্কিট-পেস্ট্রি ইত্যাদি খাওয়া বেড়ে গিয়েছে, কমেছে তাজা ফল-সবজির ব্যবহার। বেশি ময়দা বা মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়ার কতগুলো বিপদ আছে। আমাদের দাঁতগুলো টানা একটা সমতল স্ট্রাকচার নয়, তার মধ্যে ভাঁজ আছে, ফাঁক আছে। এর ফাঁকে ফাঁকেই এই ধরনের খাবার থেকে গিয়ে একটি পাতলা স্তর তৈরি করে। এই স্তরটি অত্যন্ত চটচটে ও আঠালো এবং দাঁতের গায়ে তা পরতের মতো আটকে যায়। সমস্যা হচ্ছে, খুব প্রপারলি ব্রাশ না করলে এই স্তরটা সরার কথা নয়। ফলে দিনের পর দিন তা জমে যায় এবং ক্যালকুলাস তৈরি করে।
ক্যালকুলাস কাকে বলে?
ক্যালকুলাস হচ্ছে ক্যালশিয়াম, স্যালাইভা, স্যালাইভা বা লালার মধ্যে থাকা নানা মিনারেল কম্পাউন্ডের সঙ্গে মিশে তৈরি হওয়া কঠিন একটি স্ট্রাকচার। এই লেয়ার আমাদের জিঞ্জাইভা বা মাড়ির ‘রিসেশন’ ঘটায়। মানে হচ্ছে, এর চাপে আপনার মাড়ি আসল অবস্থানের চেয়ে নিচে নেমে যায়। এটা যত হতে থাকবে, তত বেশি খাবার আপনার দাঁতে আটকাবে। মনে রাখবেন, আপনার দাঁত হচ্ছে অ্যালভিওলার বোন। তা ক্ষয়ে যেতে আরম্ভ করবে, দাঁত আর মাড়ির বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়বে ও দাঁত নড়ে যাবে।
দাঁতের সঙ্গে হার্টের স্বাস্থ্যের সম্পর্ক কী?
দিনের পর দিন তো এভাবে চলতে পারে না, দাঁতের গোড়া আলগা হয়ে গেলে ব্যাকটেরিয়া জন্মায় সেখানে। ব্যাকটেরিয়াকে ঠেকাতে যুদ্ধ শুরু করে ইমিউন সিস্টেম, বাড়ে ইনফ্ল্যামেশন। তখন মাড়ি ফুলে ওঠে, লাল হয়ে যায়, রক্ত বেরোতে পারে। ইনফ্ল্যামেশন শরীরে পুষে রাখাটা ঠিক না, তা অন্যান্য অঙ্গে সমস্যা তৈরি করে। বিশেষ করে অত্যধিক ইনফ্ল্যামেশন থাকলে রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা ক্রমশ কঠিন হয়ে যায়, বাড়ে ডায়াবেটিস। কারও কারও ক্ষেত্রে মুখের ইনফ্ল্যামেশনের কারণে রক্তজালিকায় প্রদাহ শুরু হয়ে যায়। এর উপর যাঁরা গুটকা, পান বা খৈনির মতো তামাকজাত বস্তু সেবন করেন বা সিগারেট খান, তাঁদের সমস্যা স্বাভাবিকভাবেই আরও জটিল হয়।
এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচার জন্য কী করবেন?
একেবারে ছোটো থেকেই সচেতন হওয়া দরকার এবং নিয়মিত ব্রাশ আর ফ্লস করা উচিত। ফ্লস করলে দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে জমে থাকা ময়লা সাফ হয়ে যায়, প্লাক জমতে পারে না, তৈরি হয় না ক্যালকুলাসের স্তর। সেই সঙ্গে বদল আনতে হবে খাদ্যতালিকায়, সফট ড্রিঙ্ক খাবেন না বেশি। খাবার ভালো করে চিবিয়ে খান। খাবার খাওয়ার পর ভালো করে কুলকুচো করে মুখ ধুয়ে নিন। বছরে অন্তত একবার ডেন্টিস্টের কাছে যাওয়ার অভ্যেস তৈরি করুন – দাঁতের স্বাস্থ্য খারাপ না হলে আমরা ডাক্তারের ছায়া মাড়াই না, সেটা কিন্তু বাজে অভ্যেস।